ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজা খুন দক্ষিণাঞ্চলের চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ড। ২০১৬ সালের ২৭ মে দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে বর্বরোচিতভাবে খুন হয় সে। দেখতে দেখতে প্রায় দু’ বছর কেটে গেলো। শেষ হয়নি বিচারকার্য। বিচারপ্রার্থীরা আজ কেঁদে বুক ভাসায়। হত্যাকান্ডের পরে অভিযোগপত্র দাখিল হয় ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। ওই বছর ১০ অক্টোবর অভিযোগপত্রে নারাজি দেয়া হয়। আদালতের বিচারক মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য পুলিশের সর্বোচ্চ তদন্ত সংস্থা সিআইডিকে নিদেশ দেন। সেই থেকেও কেটে গেলো আরও একটি বছর। শেষ হয়নি তদন্তকার্য। ফলে তদন্তকার্য নিয়ে আবারও চিন্তিত রয়েছেন বাদীসহ বিচারপ্রার্থীরা।
ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৪ জানুয়ারী। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে পরর্বতী সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশালে আসছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দসহ ডজনখানেক এমপি-মন্ত্রী। জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজা এই সম্মেলনে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের প্রধান দুই পদের শক্ত প্রার্থী ছিলেন। যে কারণেই প্রতিপক্ষ গ্র“পটি সম্মেলন পর্যন্ত যেতে দেয়নি তাকে। এদিকে ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে রেজার হত্যার বিচার চেয়েছেন বাদীসহ তার পরিবার।
আদালত সূত্রে জানাগেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নগরীর আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজা (২৮) হত্যা মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক অমিত কুমার দে। একই সাথে ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি তদন্তপ্রতিবেদন জমা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। এক বছর পার হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়নি।
আদালত সুত্র জানায়, গত ২৭ মে রাতে পলিটেকনিক কলেজের সামনে রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে ছাত্রলীগ নেতা রেজাকে কুপিয়ে হত্যা করে দলীয় প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় ৩০ মে নিহতের ভাই রিয়াজ বাদী হয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিনসহ ১৪ ও অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান। তদন্ত শেষে এজাহারভূক্ত আসামী যুবলীগ কর্মী মেহেদী, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম, সাইফুল, মো. মুন্না ও ফয়জুল শেখে’র অব্যহতির আবেদন জানিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট থানার জিআরও এর কাছে চার্জশীট জমা দেন পরিদর্শক আতাউর রহমান। এজাহারভুক্ত আসামিদের নাম চার্জশীট থেকে বাদ দেয়ায় গত ১০ অক্টোবর আদালতে নারাজির আবেদন জানান বাদী রিয়াজ উদ্দিন।
রিয়াজ জানান, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিমের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান সঠিক ভাবে তদন্ত করেননি। পক্ষপাত মূলক তদন্ত করে এজাহারভুক্ত মুল আসামিদের নাম বাদ দিয়ে দ্রুত চার্জশীট জমা দেন। এমনকি তিনি মামলার বাদী হওয়া সত্ত্বেও অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পূর্বে তদন্তের স্বার্থেও তার এবং সাক্ষিদের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ করেনি পরিদর্শক আতাউর রহমান। ওই বছর ১৩ আগস্ট পর্যন্ত তিনবার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে মামলাটি অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে তদন্তভার দেয়ার জন্য আবেদন করেন বাদী। পরে পূনরায় ওই বছর ১০ অক্টোবর নারাজি দেন তিনি। নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির জন্য দিন ধার্য রয়েছে আদালতে।