পোশাক খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরির সব গ্রেডেই বেসিক বা মূল মজুরি বাড়ছে। মোট মজুরি ঠিক রেখেই বেসিক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মজুরি পর্যালোচনা কমিটি। বেসিক বাড়লে বোনাস, ওভার টাইমসহ চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি অর্থ পাবেন শ্রমিকরা।
মজুরি পর্যালোচনায় দ্বিতীয় বৈঠকে শনিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গত মাস থেকে কার্যকর হওয়া নতুন বেতন কাঠামোয় বাড়ি ভাড়া,চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা যে হারে বেড়েছে, বেসিক সে হারে বাড়েনি। এ ছাড়া শ্রম অসন্তোষের পেছনে মূল আপত্তি ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের বেসিকও যৌক্তিক হারে সমন্বয় করা হবে।
নতুন মজুরি পাওয়ার পর রাজধানী এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকদের অসন্তোষ, সড়ক অবরোধ ও শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মালিকপক্ষের ৫ জন, শ্রমিকপক্ষের সমসংখ্যক সদস্য এবং শ্রম ও বাণিজ্য সচিবসহ মোট ২০ সদস্য নিয়ে মজুরি পর্যালোচনায় ত্রিপক্ষীয় এ কমিটি গঠন করা হয়।
গোয়েন্দা সংস্থা এসবি, এনএসআই, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও শিল্প পুলিশের প্রতিনিধিও রয়েছেন কমিটিতে। শনিবারের বৈঠকে কমিটির বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ষষ্ঠ দিনের মতো শনিবারও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এবং সাভার অঞ্চলের কিছু কিছু কারখানায় কর্মবিরতি ও সড়কে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। কোথাও কোথাও যানবাহন চলতে বাধা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে যায়।
শনিবারের বৈঠক শেষে অন্যদিনের মতো সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হয়নি। তবে জানতে চাইলে মালিকপক্ষের সদস্য এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বেসিক সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। রোববারের বৈঠক শেষে কতটুকু কী সমন্বয় করা হলো, তা জানানো হবে। বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি বলেন, কোনো কারখানায় গ্রেড নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে তা অন্য কারখানায় যাওয়ার সুযোগ আছে। তবে কোনো অবস্থাতেই বিশৃঙ্খলা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, মালিকরা মনে করেন, পোশাকের দর বাড়েনি অথচ বর্ধিত মজুরি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হবে। তবে ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে কোনো সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।তিনি জানান, সব গ্রেডেই বেসিক বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে কমিটি। কাজে ফিরতে শ্রমিকদের আবারও অনুরোধ করা হয়েছে। শ্রমিকরা যদি কাজ করতে না চান, তাহলে অন্তত রাস্তায় নেমে যেন বিশৃঙ্খলা না করেন, এ বিষয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর পোশাক শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। গেজেট অনুযায়ী, গত মাস থেকে নতুন কাঠামোর মজুরি কার্যকর করেছেন মালিকপক্ষ। চলতি মাসের ৭ তারিখ থেকে নতুন মজুরি হাতে পেয়েছেন শ্রমিকরা। এতদিন ন্যূনতম মজুরি ছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এর অতিরিক্ত বছরে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট ছিল।