তিনি অনুশীলনে আসতেই অনেককে বলতে শোনা গেল, ‘অভিনন্দন কোচ।’ ভাববেন না রাতারাতি কোনো হেড কোচ নিয়োগ দিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বরং আগের দিন সভাপতি নাজমুল হাসান আসন্ন ত্রিদেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজের জন্য মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসানকেই কোচের ‘পদবি’ দিয়ে ফেলেছেন। পরিবার নিয়ে সেদিনই থাইল্যান্ড থেকে ফেরা ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি কাল অনুশীলনে যোগ দিতেই তাই সতীর্থদের মজা করে অভিনন্দন জানানোর পর্ব শুরু হলো। জবাবে মজা করতে ছাড়ছিলেন না তিনি নিজেও।
অবশ্য এটাও ভালোই বুঝতে পারছেন যে দায়িত্বটা এখন বেড়ে গেছে আরো। যদিও বাড়তি কিছু করতে হবে বলেও মনে করেন না মাশরাফি, ‘আমার মনে হয় না আলাদা কিছু করতে হবে। উনি (বিসিবি সভাপতি) যেটা বুঝিয়েছেন, সেটা হলো সিনিয়র খেলোয়াড়দের দায়িত্বের বিষয়টি, যেটা সব সময়ই থাকে। আলাদা কিছু করতে গেলে আরো সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।’ আর সময়টা এমন যে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দুঃস্মৃতি পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়াও জরুরি। সেই লক্ষ্যে মাশরাফির ফর্মুলা হলো, ‘আমার কাছে মনে হয় যেভাবে চলছিল, সেটাই ঠিক আছে। হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ভালো যায়নি। বাজে সময় আসতেই পারে। এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো সেটা মাথায় না রেখে খেলা।’
মাথায় রাখতে না চাইলেও অনেক কিছু এসে যায়। যেমন এসে যাচ্ছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় সাব্বির রহমানের শাস্তির ব্যাপারটিও। তাঁর বিষয়ে বিসিবির কঠোর হওয়াটা যেমন প্রশংসা পাচ্ছে, পাশাপাশি বিপিএলের সময় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট ও আউটফিল্ড নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জেরে তামিম ইকবালকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। দুটি প্রসঙ্গই তোলা হলো মাশরাফির সামনে। জবাবে তিনি বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার বিষয়টিই যেন সব ক্রিকেটারকে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে বিসিবির অধীন আমরা সবাই। এটা মেনে নেওয়াটাও দায়িত্ব। তা ছাড়া আমাদের সবাই অনুসরণও করে। তরুণরা যারা উঠে আসছে অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে; ওরাও অনুসরণ করে আমাদের। সুতরাং মাঠের বাইরের সব কিছু ঠিক রাখা আমাদের দায়িত্ব। সামনে যেন আমরা কোনো ভুল না করি। সাব্বিরের সঙ্গে হয়েছে কিন্তু আর কারো সঙ্গে যাতে না হয়। এমনকি আমার সঙ্গেও। আমাদের কাজ হলো ভালো পারফরম করা। আর সবাই যেহেতু আমাদের অনুসরণ করে, সুতরাং নিশ্চিত করতে হবে যে মাঠের বাইরে নিজেদের কাজগুলো যাতে আমরা ঠিক করি।’
আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজে মাঠের ভেতরের কাজগুলোও ঠিকঠাক করতে চান ওয়ানডে অধিনায়ক। এ টুর্নামেন্টের সাফল্য দিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকায় বাজে পারফরম্যান্সের ধাক্কাও সামলে নিতে চান তিনি। সেই জন্য জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আয়োজিত হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপায় চোখ মাশরাফির, ‘এ সিরিজটি অবশ্যই জেতার পরিকল্পনা থাকবে। এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণও। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার পর সবাই আপসেট। আমরা যদি এটা (ত্রিদেশীয় সিরিজ) জিততে পারি, তাহলে পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যেতে পারে।’ কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় সব ফরম্যাটেই যেমন খেলে এসেছে বাংলাদেশ, তাতে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব সহজ ব্যাপারও নয়। মাশরাফি অবশ্য বোঝাতে চাইলেন যে এমন কঠিন কিছুও নয়। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধ কন্ডিশনের সঙ্গে দেশের মাঠের খেলাকে কিছুতেই মেলাতে চাইলেন না তিনি, ‘আমার মনে হয় না কঠিন কিছু হবে। বিশেষ করে ওয়ানডেতে। কারণ একটি সিরিজ দিয়ে সব কিছু বিবেচনা করা যায় না। নিউজিল্যান্ডেও ৩-০-তে হেরে এসেছিলাম। কিন্তু এ রকম চাপে পড়িনি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিটি ফরম্যাটে আমরা বাজে খেলেছি। আমাদের এখন কাজ হবে ঠিক কাজটি করা। হোমের জয় বিদেশে কোনো কাজে আসে না। কারণ হোম অ্যাওয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান থাকে। হোমের সিরিজটি আমরা জিততে চাই।’ সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতিতে নেমে পড়া বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফরাও আজ থেকে যোগ দিতে শুরু করবেন। সহকারী কোচ রিচার্ড হালসাল ও স্পিন কোচ সুনীল যোশি আজই যুক্ত হচ্ছেন। আর বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের যোগ দেওয়ার কথা ৫ জানুয়ারি। ১৫ জানুয়ারি থেকে ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর আগে নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলেও প্রস্তুতি ঝালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা বাংলাদেশ দলের। সেই চিন্তা থেকেই লাল-সবুজ দল গড়ে দুটি দিবা-রাত্রির প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মাশরাফি-সাকিবরা। ৬ জানুয়ারি প্রথম ম্যাচটি দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে শেষ হবে রাত পৌনে ৮টায়। আর ৯ জানুয়ারির ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর ১টায়।