খুলনার বটিয়াঘাটায় স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় বাইনতলা পুলিশ ক্যাম্পের ১২ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ বটিয়াঘাটা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামানকে থানায় ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। এর আগে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীরা স্কুল ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও করে রাখে ও জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। এসব ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদবাইনতলা স্কুল ও বাইনতলা পুলিশ ক্যাম্পের সামনে এসব ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ইভটিজিংয়ে জড়িত ৫ পুলিশ সদস্য জাহিদ (ক. নং. ৪২৪), আবির (ক.নং. ১৬৮৩), রিয়াজ (ক. নং. ৯৮৫), সুমন্ত ও নাঈম (ক. নং. ২২০৮) কে বরখাস্তের কথা জানানো হলেও পরে অভিযুক্ত ৫ জনসহ ক্যাম্পের ১২ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয় এবং তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, বখাটেদের ইভটিজিং প্রতিরোধসহ এলাকার আইন-শৃংখলা রক্ষার জন্য উপজেলার বাইনতলা স্কুল এন্ড কলেজ ভবনের পাশেই বাইনতলা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কিন্তু এই ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরাই স্কুলগামী মেয়েদের প্রতিনিয়ত ইভটিজিং করতো।
স্থানীয় আমিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গোলদার জানান, গতকাল সকালে স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পুলিশ সদস্যরা ইভটিজিং করলে তার ভাই তরিকুল ইসলাম এর প্রতিবাদ করেন। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা এসময় ওই যুবককে নির্যাতনসহ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে। এতে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও করে।
নির্যাতিত যুবক তরিকুল ইসলাম জানান, ‘’আমি ক্যাম্প ইনচার্জকে বিষয়টি জানাতে গেলে তাকে পাইনি। পরে দোতলার বারান্দায় বসে থাকা পুলিশ সদস্যদের এভাবে মেয়েদেরকে ইভটিজিং না করার জন্য অনুরোধ করি। এরপর আমি ক্যাম্পের সামনে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এলে চার পুলিশ সেখানে ঢুকে কম্পিউটারসহ অন্যান্য মালামাল ভাংচুর করে। আমাকে ধরে ক্যাম্পের দোতলায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে।”
স্থানীয়রা জানায়, এসময় পুলিশকে বাধা দিতে গেলে তারা গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। বাইনতলা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হাছিব গোলদার জানান, মেয়েদের সবসময়ই ক্যাম্পের পুলিশরা ইভটিজিং করতো। আগেও কয়েকদফা তাদেরকে নিষেধ করা হলেও তারা তা’ শোনেনি। বরং মেয়েদেরকে মোবাইল নম্বর দেওয়া, তাদের পেছন পেছন বাড়ি যাওয়া ও তাদের কথামতো চলার জন্য হুমকি দিতো। তিনি জানান, ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় সকালে স্থানীয় যুবককে মারধরের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীরা পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও করে। এসময় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তরা ঘটনাস্থলে এসে কয়েকজনকে বরখাস্ত করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বটিয়াঘাটার থানার ওসি মোজাম্মেল হক মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৫ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে ঘটনার সময় ক্যাম্পে উপস্থিত না থাকায় ক্যাম্প ইনচার্জ মো. তারিকুজ্জামানসহ ওই ক্যাম্পের ১১ পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা জানান, আপাতত কাউকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না। ক্যাম্পের ১২ জনকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেখানে নতুন পুলিশদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক জানান, এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।