রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে হাড়কাঁপানো শৈত্যপ্রবাহ বইছে। অপরদিকে বৃষ্টির মতো ঘনকুয়াশা পড়ছে, যা দৃষ্টিসীমাকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করতে হচ্ছে।
শৈত্য প্রবাহের কারণে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া , জ্বর আর শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুধু নিউমোনিয়া আর কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৯ শিশু মারা গেছে বলে শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে।
হাসপাতালের ৩টি শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৫ শতাধিক শিশু। ওয়ার্ডগুলোতে বেডের সংকুলান না হওয়ায় একেকটা বেডে ৩টি করে শিশুকে থাকতে দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের অভিভাবকরা দিন-রাত হয় দাঁড়িয়ে না হয় হাসপাতালের ফ্লোরে বসে বিনিদ্র রাত কাটাতে হচ্ছে।
শুধু তাই নয় একটি স্যালাইনের পাইপ দুই-তিন শিশুকে পুশ করার ঘটনাও ঘটছে প্রকাশ্যে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সারাদিনে একবার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসেন তাও আবার রেজিস্টার পদমর্যাদার।
ইন্টার্ন ডাক্তাররা মাঝেমধ্যে আসেন, চিকিৎসা সেবা দেন। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসকরা ওয়ার্ডগুলোতে আসেন না বললেই চলে।
সরেজমিনে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে এ ঘটনার সত্যতাও মিলেছে। অথচ দুপুরের পর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা গভীর রাত পর্যন্ত মোটা অঙ্কের ফি নিয়ে রোগী দেখার ব্যবসা করছেন।
এদিকে প্রচণ্ড শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে গত ১০ দিনে তিন নারী দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। শনিবার বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া ৫ রোগী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. পলাশ। তিনি বলেন, বর্তমানে আগুনে দগ্ধ ২৫ রোগী ভর্তি আছেন আর ৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩ ও ৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে হাসপাতালের বেডগুলো ছাপিয়ে ফ্লোরে কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। প্রচণ্ড শীতে বৃদ্ধ নারী পুরুষরাই সবচেয়ে বেশি শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
এভাবেই গাদাগাদি করে চিটকিৎসা নিতে হচ্ছে রংপুর মেডিক্যালেএভাবেই গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রংপুর মেডিক্যালে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, স্যালাইন এমনকি স্যালাইন দেওয়ার নিডিলসহ আনুষঙ্গিক সব উপকরণ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
ডাক্তাররা আসেন, প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে চলে যান। সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর কোন ডাক্তার পাওয়া যায় না। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে আসা বৃদ্ধা সোনা মিয়ার কন্যা শারমিলি বেগম জানান, ৪ দিন ধরে ভর্তি আছেন তার বাবা। কোনও চিকিৎসাই হচ্ছে না।