এপ্রিল ২৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আদালতপাড়া ঢাকা প্রচ্ছদ প্রশাসন রাজণীতি

গ্যাটকো দুর্নীতি : খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ৭ ফেব্রুয়ারি

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

প্রয়োজনীয় নথিপত্র না পাওয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নথিপত্র চেয়ে সময়ের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে অবস্থিত ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন এই দিন ধার্য করেন।

এর আগে ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার দিন ধার্য ছিল। তবে অসুস্থ থাকায় সেদিন তাকে আদালতে হাজির না করে আদালতে কাস্টডি ওয়ারেন্ট পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ।

কাস্টডি ওয়ারেন্টে উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই তাকে আদালতে উপস্থিত করানো যায়নি।

আদালতের শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার পায়ে ফোঁড়া ওঠায় তাকে আদালতে আনা সম্ভব হয়নি। তাই কারা কর্তৃপক্ষ কাস্টডি ওয়ারেন্ট পাঠিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেও মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি করা যেতে পারে। তার কারণে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি হচ্ছে না।

অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমরা জানতে পেরেছি খালেদা জিয়া অসুস্থ। তার অনুপস্থিতিতে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির কোনো সুযোগ নেই।

আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আসামির অনুপস্থিতিতে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির কোনো সুযোগ নেই। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দিলদার হোসেন বলেছিলেন, হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার। আগামী ২৪ জানুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হলো। ওই দিন সব আসামির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

গত ১০ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (হাজিরা পরোয়ানা) জারি করেন একই আদালত। ওই দিন মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এ জন্য সময় দেয়ার আবেদন করলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল তার বিরোধীতা করেন।

তিনি বলেছিলেন, মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তাই লম্বা সময় না দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলাটির চার্জ গঠন করা হোক। একই সঙ্গে খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তাকে আদালতে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারির আবেদন করেন তিনি।

সেদিন আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেছিলেন এবং মামলাটির চার্জ গঠনের জন্য ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

প্রসঙ্গত ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।

পরে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো। এর তিনদিন পর খালেদা জিয়া ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চাওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।

এরপর দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাইকোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং মামলাটি কেন বাতিলের নির্দেশ দেয়া হবে না -এ মর্মে রুল জারি করেন।

মামলার ২৪ আসামির মধ্যে ৬ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূইয়া, এম কে আনোয়ার, জামায়াতে ইসলামীর আমির সাবেক মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।

অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি দলীয় সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের (অব.) স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, গ্যাটকোর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম শাহাদত হোসেন, বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন ও বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official

সোলাইমান সেলিম-জ্যোতি তিনদিনের রিমান্ডে

banglarmukh official