বানারীপাড়ায় পরিবার পরিকল্পনা অফিসে সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে মতামত না নিয়েই পুরুষ বন্ধা করণ করার অভিযোগে এক নারী দালালকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে এস.আই মোশারেফ হোসেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বানারীপাড়া উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রেকসোনা বেগম (৪০) নামের ওই নারী দালালকে আটক করেন। সংস্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারী পর্যন্ত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবা সপ্তাহ চলছে। এ সময় টার্গেট ফিলাপ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বানারীপাড়া উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ৮টি ইউনিয়নের এফ.ডব্লিউ.এ সহ সংস্লিষ্টরা।
টার্গেট ফিলাপের ক্ষেত্রে তারা টাকার বিনিময়ে এলাকা ভিত্তিক পুরুষ ও মহিলা দালাল নিয়োগ করেছেন বলে জানাগেছে। ওই দালালদের টার্গেট দিয়েছেন এক জন পুরুষ ও মহিলাকে বন্ধা করণের জন্য তাদের কাছে নিয়ে আসতে পারলে নগদ ৫’শ টাকা করে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী হাবাগোবা পুরুষ ও মহিলার সন্ধানে দিন রাত কাজ করতে থাকেন উপজেলার উয়দকাঠী গ্রামের মৃত শহিদ হাওলাদারের স্ত্রী রেকসোনা বেগম। তিনি যখন যেখানে সহজ সরল লোক পাচ্ছেন তাকেই ওই বিষয়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে ভূল বুঝিয়ে এফ.ডব্লিউ.এ’র মাধ্যমে বন্ধা করণ করাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানা গেছে সোমবার সকালে উপজেলার সৈয়দকাঠী গ্রামের জেলে সুশীল নাটুয়া (৩২) বরিশাল’র কীর্তনখোলা নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে বাসযোগে এসে বানারীপাড়া স্ট্যান্ডে নামেন। এ সময় উদয়কাঠী এলাকার রেকসোনা নামের ওই নারী দালাল তার পিছু নিয়ে তাকে স্বাস্থ্য ভাল করার জন্য সরকারী হাসপাতালে বিনা মূল্যে ভিটামিন ইনজেকশন, ১টি লুঙ্গি ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে দেয়া হয় বলে জানান। দরিদ্র মৎস্য শিকারী সুশীল নাটুয়া ওই নারী দালালের কথা বিশস করে তার সাথে হাসপাতালে যান। সেখানে যাওয়ার পর ওই দিন বিকেল ৪টায় ডাক্তার মোঃ রফিকুল ইসলাম সহ সংস্লিষ্টরা তাকে পুরুষ বন্ধা করণ সম্পর্কে কোন ধরনের কাউন্সিলিং বা তার ব্যক্তিগত মতামত না নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র ওটিতে তার পুরুষ বন্ধা করন অপারেশন করেন।
অপারেশন শেষে তাকে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ৩ হাজার টাকা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র দেয়ার নিয়ম থাকলেও শুধু মাত্র ১৩’শ টাকা ও ১টি লুঙ্গি দিয়ে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হয়। পরে তিনি জানতে পারেন তাকে ভিটামিন ইনজেকশন দেয়ার কথা বলে পুরুষ বন্ধা করন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে নারী দালাল রেকসোনাকে আসামী করে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বানারীপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওসি (তদন্ত) মোঃ ফারুক খান ওই অভিযোগ তদন্ত করার জন্য এস.আই মোশারেফ হোসেনকে নির্দেশ দেন। এস.আই মোশারেফ ওই দিন বেলা ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তদন্ত করতে যান। এ সময় তার তদন্তে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। তিনি জানতে পারেন মাছ শিকারী সুশীলকে বন্ধা করন করার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়া রেকসোনা সৈয়দকাঠী এলাকার এফ.ডব্লিউ.এ শারমিন আক্তারের দালাল এবং সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই রয়েছেন। রেকসোনা বেগম পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রায় দু’ঘন্টা ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র বাথরুমে পালিয়ে থাকেন। পুলিশ ওই বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে সে বাথরুম থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে।এ বিষয়ে ওসি (তদন্ত) মোঃ ফারুক খান জানান তদন্ত পূর্বক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এদিকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা (ইউ.এফ.পি.ও) মোঃ মেহেদী হাসান জানান আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা,জানেন মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈমা খান। এ বিষয়ে ডা.নাঈমা খান জানান আটক রেকসোনা বেগম তাদের সংস্লিষ্ট কেউ না। কোন ব্যাক্তিকে বন্ধা করণ করার পূর্বে তাকে তিন ধাপে কাউন্সিলিং করা হয়। এ ক্ষেত্রে কাগজপত্রে তাকেও তিন ধাপে কাউন্সিলিং করা হয়েছে বলে তার কাছে ডকুমেন্টস রয়েছে । এ বিষয়ে ভূক্তভোগী সুুশীল নাটুয়া জানান তাকে কোন ধরনের কাউন্সিলিং না করেই ভিটামিন ইনজেকশন দিলে তার স্বাস্থ্য ভাল হয়ে যাবে বলে এফ.ডব্লিউ.এ শারমিন খানম তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এদিকে এফ.ডব্লিউ.এ শারমিন খানমের মুঠোফোনের নম্বর অফিসের কেউই জানেন না বলে জানালে,তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত বানারীপাড়ায় সব সময় সহজ সরল,অসচেতন, হতদরিদ্র ও নিরক্ষর নারী-পুরুষদের ভুল বুঝিয়ে বন্ধাকরণ করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।