রাজধানীর যানজট নিরসনে এখন চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। এবার রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় আরও গতি আনতে পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর আওতায় পুরো ঢাকা শহর ঘিরে চারটি সাবওয়ে রুট করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে রাজধানীতে পাতাল রেল স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
বর্তমান সরকার আমলে পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বড় বড় প্রকল্প এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এ বাস্তবতা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে পাতাল রেল স্থাপনের বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে গত ডিসেম্বরে রাজধানীর গুলশানের একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাতাল রেল সেবা চালুর প্রতিশ্রুতি দেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাজধানীর বিরক্তিকর যানজট দূর করতে পাতাল রেল সেবা চালুর কথা বলেন তিনি। পাতাল রেল প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক এ ধরনের প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগ্রহী। পাতাল রেলের জন্য সাবওয়ে স্থাপন হলে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০ মিটার নিচ দিয়ে চলবে যাত্রীবাহী ট্রেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরে পূর্ব-পশ্চিম বরাবার দ্রুত সংযোগ ঘটবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার ৮০ ভাগ কর্মজীবী মানুষ সাবওয়ে দিয়ে চলাচল করবে। দিনে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটবে মাটির নিচ দিয়ে।
নতুন এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকবে সরকারের সেতু বিভাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাবওয়ে প্রকল্প নিয়ে খুবই আশাবাদী। তিনি নিজে এ প্রকল্প সম্পকে খোঁজ-খবর রাখছেন। সেতু সচিব জানান, প্রস্তাবিত যেসব মেট্রোরেল রুট আছে সেগুলো ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণের মধ্যে টানা হয়েছে।
এ কারণে ঢাকার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর সাবওয়ে রুট টানার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেতু ভবন সূত্র জানায়, সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনাকে উচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাবওয়ে রুটের সম্ভাব্য যাচাই করে প্রস্তাব দেবে।
সেতু ভবন সূত্রে জানা গেছে, সাবওয়ের জন্য এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য চারটি রুট চিন্তা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথম রুট হবে টঙ্গী থেকে উত্তরা, এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, কাকলী, মহাখালী, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন, শাপলা চত্বর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া হয়ে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড পর্যন্ত।
সাবওয়ের দ্বিতীয় রুটে থাকছে আমিনবাজার থেকে গাবতলী, শ্যামলী, আসাদগেট, নিউ মার্কেট, টিএসসি, বঙ্গবাজার, ইত্তেফাক মোড় হয়ে সায়দাবাদ পর্যন্ত এলাকা। এর তৃতীয় রুটটি শুরু হবে গাবতলী থেকে। মিরপুর-১, মিরপুর-১০, কাকলী, গুলশান, নতুন বাজার, রামপুরা টিভি ভবন, খিলগাঁও, শাপলা চত্বর হয়ে এই রুট শেষ হবে সায়দাবাদ গিয়ে।
অন্যদিকে, সাবওয়ের চতুর্থ রুটটি রামপুরা টিভি স্টেশনের সামনে থেকে শুরু হয়ে নিকেতন, তেজগাঁও, সোনাগাঁও হোটেল, রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি ২৭, রায়ের বাজার, জিগাতলা, আজিমপুর, লালবাগ হয়ে শেষ হবে সদরঘাটে। এখন পর্যন্ত সাবওয়ের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য পরামর্শক দিয়ে কাজ করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেতু বিভাগ।
পরামর্শক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করতে ২১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৮৩১ টাকায় একটি ক্রয় প্রস্তাব গত বছরের শেষ দিকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। সেতু সচিব খন্দকার আনোয়ার বলেন, মেট্রোরেল বা ফ্লাইওভার করতে গিয়ে যে ধরনের দুর্ভোগ পরিস্থিতি ঢাকায় হয়েছে, সাবওয়ে করতে গিয়ে তেমন কোনো পরিস্থিতি হবে না। কারণ পুরো কাজটি হবে মাটির নিচে।
ঢাকা শহরের ৩০ মিটার নিচ দিয়ে যাবে প্রতিটি সাবওয়ে রুট। আর সে কারণে জমি অধিগ্রহণেরও প্রয়োজন হবে না। মেট্রোরেলের পর মেগাসিটি ঢাকার যানজট নিরসনে সাবওয়ে সবচেয়ে বেশি ফলদায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেতু ভবন জানায়, বর্তমান সরকার সাবওয়ের যেকোনো একটি রুটের কাজ শুরু করতে চায়। এ বছরে সম্ভব না হলেও আগামী বছরের মধ্যে সেটা সম্ভব হবে।