খুন ও গুমের অভিযোগে দায়ের করা মামলার ১১ বছর পরে মা-মেয়েকে উদ্ধার করেছে সর্বোচ্চ তদন্ত সংস্থা সিআইডি।
মঙ্গলবার বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের ইছাগুড়া গ্রাম থেকে ১১ বছর ধরে নিখোঁজ জোৎসনা বেগম ও তার মেয়ে জিবাকে উদ্ধার করা হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, যৌতুকের দাবীতে জোৎসনা বেগমকে বিভিন্ন সময় মারধর করত তার স্বামী বরিশাল সদর উপজেলার ৪নং শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের আ: রশীদ মুন্সীর ছেলে মো: আহাম্মদ উল্লাহ মুন্সী। সর্বশেষ ২০০৭ সালের ৯ই জুলাই জোৎসনা বেগমকে পুনরায় যৌতুকের দাবীতে পুনরায় মারধর করে তাকে বেহুশ করে ফেলা হয়। সেই থেকেই জোৎসনা বেগম ও তার মেয়ে জিবার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় জোৎসনা বেগমের ভাই সরোয়ার খান বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই জোৎসনা বেগমের স্বামী আহাম্মদ উল্লাহ মুন্সীসহ ৬ জনকে নামধারী আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি এতদিন বরিশাল আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীণ ছিল। মামলার অন্যান্য আসামীরা হল, শহীদ মুন্সী, ইউনুছ মুন্সী, সালেমা বেগম, আসমা বেগম ও জাহেদা বেগম। যাদের সবার ঠিকানা কোতয়ালী মডেল থানাধীণ শায়েস্তাবাদের চরআইচায়। মামলা সূত্রে জানা যায়, মামলা দায়েরের প্রায় ৯ বছর পূর্বে আহাম্মদ উল্লাহ মুন্সীর সাথে কোতয়ালী মডেল থানাধীন এলাকার মৃত ওয়াজেদ আলী খানের মেয়ে জোৎসনা বেগমের বিবাহ হয়। তখন জোৎসনা বেগমের স্বামী শায়েস্তাবাদ হায়াৎসর মসজিদে ইমামতি করতেন। এরই মধ্যে জোৎসনার স্বামী তার ভাইকে মালেশিয়া পাঠানোর জন্য জোৎসনার কাছে ১ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। তখন সে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে এবং তার মেয়েকে মারধর করে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে মীমাংসার মধ্যে দিয়ে জোৎসনা ও তার মেয়েকে পুনরায় ফিরিয়ে নেয় আহাম্মদ উল্লাহ মুন্সী। সর্বশেষ ২০০৭ সালের ৯ই জুলাই সন্ধ্যা ৮টার দিকে মামলার বিবাদীরা পুনরায় ১ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তার মুখ বেঁধে বেধরক মারধর করে। এতে জোৎসনা বেহুশ হয়ে পড়লে তার মেয়ে জিবার ডাকচিৎকারে বিষয়টি সকলেই টের পায়।
পরেরদিন জোৎসনার ভাই সরোয়ার খান বোনের শ্বশুড় বাড়ি গিয়ে ১ থেকে ৬নং বিবাদীদের উপস্থিত পেয়ে তার বোন এবং ভাগ্নির কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের পাওয়া যায়নি। এছাড়া দায়ের করা মামলায় জোৎসনা বেগম ও তার মেয়ে জিবাকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলার অভিযোগ আনেন জোৎসনা বেগমের ভাই সরোয়ার খান। মামলাটির প্রথম পর্যায়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের এসআই মাহাবুবুর রহমানকে। তিনি আহাম্মদ উল্লাহ মুন্সী ও তার ভাই শহীদ মুন্সীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। মামলাটি বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য এলে মামলার মূল উপাদান বা ভিকটিম না পাওয়ায় আদালতের বিচারকের কাছ থেকে মামলাটি চলতি বছরের ৩ই জানুয়ারী অধিক তদন্তের জন্য সিআইডির কাছে নির্দেশ আসে। বিষয়টি তদন্তের পর সিআইডি বরিশালের পুলিশ পরিদর্শক মো: ফরিদুজ্জামান মূল ভিকটিম জোৎসনা বেগম ও বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষার্থী তার মেয়ে জিবাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন।