চিকিৎসকের কথা সবাই মানেন না। অনেকেই মাত্রা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেন না, নির্দিষ্ট সময় ফলো-আপে যান না। গবেষকেরা বলছেন, প্রায় প্রত্যেক মানুষ কোনো না–কোনো সময় এমনটি করেন। এই বিচ্যুতি ব্যক্তি ছাড়াও সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্সের গবেষকেরা বলছেন, রোগীদের এই আচরণের কারণে দেশটিতে বছরে ৬৪ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার বাড়তি খরচ হয়। নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন না করা বা চিকিৎসকদের নির্দেশ না মানার প্রবণতা শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশি। গবেষকেরা বলছেন, ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড ও ফার্মেসির মধ্যে যোগসূত্র রাখলে এই প্রবণতা কমানো সম্ভব। এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান বলেন, চিকিৎসকের নির্দেশ না মানলে প্রথম ক্ষতি রোগীর নিজের। কিছু রোগের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে রাষ্ট্রের ওপর। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, নিয়মিত ও নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ সেবনে যক্ষ্মা ভালো হয়। একজন রোগীর মাধ্যমে অন্য মানুষে যক্ষ্মা ছড়ায়। আবার যক্ষ্মার জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী (এমডিআর যক্ষ্মা) হয়ে ওঠে। এমডিআর যক্ষ্মার চিকিৎসা খরচ সাধারণ যক্ষ্মার চিকিৎসার খরচের চেয়ে ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি। এই খরচ বাংলাদেশ সরকারকেই বহন করতে হয়।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর আড়াই লাখের বেশি নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়।এদের মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশ রোগী নিয়মিত বা সঠিক মাত্রায় ওষুধ খায় না বা চিকিৎসা শেষ করে না। বছর পাঁচেক আগে ডায়াবেটিস নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৭০ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। এর প্রধান কারণ, রোগীরা ঠিকমতো ওষুধ সেবন করেন না বা চিকিৎসকের অন্যান্য পরামর্শ মানেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলছেন, কোন রোগী নিয়ম বা চিকিৎসকের নির্দেশ মানছেন না, তা শনাক্ত করার সর্বজনগ্রাহ্য পদ্ধতি নেই। তবে কেউ হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ব্যক্তিগত চেম্বারে এলে চিকিৎসক বুঝতে পারেন কোন রোগী নিয়ম বা নির্দেশের ক্ষেত্রে হেলাফেলা করেছেন। এ ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি সহায়তা করতে পারে বলে গবেষকেরা মন্তব্য করেছে। তাঁরা বলছেন, এখন অনেক হাসপাতাল ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড ব্যবহার করে। আবার অনেক ফার্মেসিতে ইলেকট্রনিক পিলবক্স (এসব বক্সে নির্দিষ্ট সংখ্যায় বড়ি বা ওষুধের প্যাকেট রাখা হয়। বিক্রি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হিসাব বক্সের ওপর বৈদ্যুতিক অক্ষরে ভেসে ওঠে) থাকে। ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড ও ইলেকট্রনিক পিলবক্সের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা গেলে কোন রোগী কোন ওষুধ কিনছেন না, তা জানা সম্ভব।
গবেষকেরা ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৮৯ জনকে নিয়ে গবেষণা করেছেন। এরা প্রত্যেকেই ছিল দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী। স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের প্রতিবেদন ও পিলবক্সের রেকর্ড বলছে, ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়ম বা নির্দেশ মেনে ওষুধ কিনছে না বা সেবন করছে না। গবেষকেরা বলছেন, এ বিষয়ে বৃহত্তর পরিসরে গবেষণা হওয়া দরকার।