নিউজ ডেস্ক:
বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে কলেজছাত্র ইমরান হোসেনকে (২২) খুন করা হয়েছে। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধু ইমরানকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান আরিফুল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ লাইনের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইমরানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন আরিফুল।
শনিবার সকালে উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের মুন্সিরতালুক গ্রামের একটি বাগান থেকে কলেজছাত্র ইমরান হোসেনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত ইমরান মুন্সিরতালুক গ্রামের কৃষক সরোয়ার হোসেন হাওলাদারের ছেলে এবং উপজেলার ভবানীপুর এলাকার হাজি তাহের উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে এ বছর বিএ শেষবর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন।
ইমরান হত্যার ঘটনায় তারই বন্ধু আরিফুল ইসলামকে (২৭) গ্রেফতার করে পুলিশ। কারণ আরিফুল আর ইমরান প্রতিবেশী এবং একে-অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
আরিফুরের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগে আরিফুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়ার সঙ্গে ইমরানের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে স্বেচ্ছায় মেলামেশা করলেও একপর্যায়ে পরকীয়া সম্পর্ক ছিন্ন করেন রাবেয়া। তবে সম্পর্ক ছিন্ন করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইমরান। এরপর ইমরান মোবাইলে ধারণ করা আগের মেলামেশার ভিডিও দেখিয়ে রাবেয়াকে অবৈধ মেলামেশায় বাধ্য করেন।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, একপর্যায়ে ইমরানের বিষয়টি স্বামী আরিফুল ইসলামকে জানান স্ত্রী রাবেয়া। এজন্য অনেকবার ইমরানকে সতর্ক করেছেন আরিফুল। কিন্তু তাতেও সতর্ক হননি ইমরান।
এরই মধ্যে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঘরের পেছনে স্ত্রীর সঙ্গে ইমরানকে আপত্তিকর অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলেন আরিফুল। সেই সঙ্গে ইমরানের মোবাইলে স্ত্রীর সঙ্গে ইমরানের অশ্লীল ছবি দেখতে পান।
ওই দিন রাতে একান্তে কথা বলার জন্য ইমরানকে বাড়ির অদূরে বাগানে নিয়ে যান আরিফুল। সেখানে মোবাইলে স্ত্রীর সঙ্গে ইমরানের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলতে বলেন আরিফুল।বারবার বলার পরও ওসব ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলতে রাজি হননি ইমরান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাতে থাকা দা দিয়ে গলায় কোপ দিয়ে ইমরানকে হত্যা করেন আরিফুল।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হত্যার পর জামা-প্যান্টে লেগে থাকা রক্ত পুকুরে ধুয়ে বাড়িতে গিয়ে ঘুমান আরিফুল। পরদিন সকালে ইমরান হোসেনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত ইমরানের বাবা সরোয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
এরপর বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য ও মুঠোফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে বুধবার রাতে আরিফুল ইসলাম (২৭) ও স্ত্রী রাবেয়া আক্তারকে (২২) গ্রেফতার করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন আরিফুল। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে আরিফুলকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম।