প্রিন্স মুন্সী :
বকেয়া বেতনের দাবিতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে (বিসিসি) অব্যাহত রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন।
তারা গত রোববার থেকে সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত প্রতিদিন কর্মবিরতি পালন করে আসছে। আর নগর ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেয়রের কক্ষের সামনে বসে স্লোগান, সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
চলমান আন্দোলনের পঞ্চম দিনে বৃহষ্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে আন্দোলনরতদের সাথে মেয়রের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনকারীরা এতে কোন সারা দেয়নি।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, বকেয়া বেতনের দাবীতে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনায় বসার জন্য আমরা বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর তাদের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ বসতে চাচ্ছে আবার কেউ চাচ্ছে না। আর না বসলে এর সমাধান কিভাবে হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না।
মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেত। পাশাপাশি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও পরিশোধ করে আসছি। তারপরও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনেগেছে, এখন আলোচনায় বসতে চাইলে বসছে না। এই নগরের মানুষের সেবার বিনিময়েই কর্পোরেশন আয় করে থাকে, সেটা তাদের মাথায় থাকতে হবে। আবার কি আয় হচ্ছে কি ব্যয় হচ্ছে তা তো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবই জানেন। তাই আয় বাড়াতে হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমাকে সহায়তা করতে হবে।
তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন স্কেল বাড়লেও বাড়ছে না সিটি কর্পোরেশনের আয়। আয় বাড়াতে এরই মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। যারমধ্যে নগরের বহুতল নতুন ভবনগুলোর কর আদায়, ফ্লাট বাড়িগুলোর ফ্লাট অনুযায়ী হোল্ডিং নাম্বার নির্ধারন, শাখা সড়কগুলোসহ নগরের সকল দোকানপাটের সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সের আওতাভুক্ত করা।
আবার নগরবাসীকে দূর্নিতীমুক্ত দ্রুত সেবা দিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হবে । কিছু মানুষের দূর্ণীতির কারনে কর্পোরেশনের কাঙ্খিত আয় এরআগে বাধাগ্রস্থ হয়েছে। তাই সেখানেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নানান অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় কর শাখার মুশফিক আহসান আজমসহ অনেককেই আমি বদলি করেছি।
মেয়র বলেন, চলমান আন্দোলনের কারনে প্রায় ৬ টির মতো নতুন প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়াসহ নগরবাসী নানান ভোগান্তিতে পড়েছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের নগর ভবন শাখার সম্পাদক দীপক লাল মৃধা বলেন, গতবছর এপ্রিল মাসে বকেয়া বেতনের নামে আন্দোলনে নামার পরে মেয়র জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সে বৈঠকের সিদ্বান্তগুলো বাস্তবায়নের কথা ছিলো দ্রুত কিন্তু হয়নি।
তিনি বলেন, বিগত বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হোক আর কর্মকর্তা-কর্মচারদের বকেয়া বেতন দিয়ে দেয়া হোক তাহলে নতুন করে বৈঠকের প্রয়োজন কি। আর যদি বৈঠক করতে হয় তবে আন্দোলনকারীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতবারের বৈঠকে উপস্থিত
সকলকে ডাকা হোক।
তিনি বলেন, দূর্ণিতী আন্দোলনকারীরা করে না। যারা কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্টজন তারাই দূর্নীতি করছে। কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোতালেব সাহেবের সনদ জাল বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কয়েকমাস পূর্বে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলো। কিন্তু সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা তো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মেয়রের যারা কাছের লোক তাদের তো বদলীও করা হয়না। আবার কর্তৃপক্ষ শুধু ঠিকাদারের বিলই পরিশোধ করেন, আমাদের কথা ভাবেন না। আর ভাববেনও বা কিভাবে সিটি কর্পোরেশনের ৩০ ওয়ার্ডের মধ্যে হাতেগোনা ২/১ কাউন্সিলর ছাড়া সবাই তো ঠিকাদার।
আন্দোলনকারীরা জানান, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের যে আয় রয়েছে, তা দিয়ে ভালোভাবেই সকল স্টাফদের প্রতিনিয়িত বেতন প্রদান সম্ভব। কিন্তু বর্তমান মেয়র ক্ষমতায় বসার পর প্রায় ৩ শত জনকে নানানভাবে নিয়োগ দিয়েছে, যারা এখন বাড়তি বোঝা। আন্দোলনকারীরা জানান,৬ মাস ধরে ৫ শতাধিক নিয়মিতো কর্মকর্তা-কর্মাচারী এবং ৪ মাস ধরে প্রায় এক হাজার ৪শত দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেয়া বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ২২ টির মতো প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকায় আটকে রয়েছে ।