অনলাইন ডেস্ক:
কেন্দ্রে পাঠানো তৃণমূলের তালিকায় নাম না থাকলেও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নির্বাচন করতে বরিশালের ছয় জেলার ৪০টি উপজেলার শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তাদের কেউ কেউ নির্বাচন করার ঘোষণা দিচ্ছেন। এমনকি দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও ভোট থেকে তারা সরবেন না।
স্থানীয় নেতাদের এমন মনোভাবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কা করছেন মাঠের নেতাকর্মীরা। অবশ্য এ শঙ্কার কথা মানতে নারাজ দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। তাদের মতে, দল যাকে নৌকা দেবে তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামবেন।
দলের কেউ নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিলে তার ব্যাপারে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে।বরিশাল বিভাগের ৪৪টি উপজেলার মধ্যে ৪০টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চতুর্থ ধাপে অর্থাৎ ৩১ মার্চ এ বিভাগে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ বলছে ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদ উন্মুক্ত রাখার কথা। এ দুটি পদে দলীয় কোনো প্রার্থী দেবে না আওয়ামী লীগ।
চেয়ারম্যান পদে তৃণমূলের তালিকা চায় কেন্দ্র। সে অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের প্রায় সব জেলা থেকে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ জানান, সব উপজেলা থেকে জেলা কমিটিতে একটি করে তালিকা পাঠানো হয়।
উপজেলা পর্যায়ে তৃণমূলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর তা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মধ্য থেকে জনপ্রিয় এবং সৎ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তৃণমূল থেকে সর্বসম্মতভাবে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। যেসব উপজেলায় একক প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি সেসব উপজেলার বিপরীতে একাধিক প্রার্থীর নাম পাঠানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে খান সাইফুল্লাহ বলেন, তৃণমূল নেতাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই তালিকা পাঠানো হয়েছে। দক্ষিণের প্রায় সব জেলা-উপজেলা থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের নামের সর্বসম্মত তালিকা ঢাকায় পাঠানো হলেও এর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন শতাধিক প্রার্থী। তাদের অনেকে আবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
ঢাকায় পাঠানো তালিকা অনুযায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমানের নাম প্রস্তাব করা হয়। ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহীন হোসেন ও মোর্শেদা লস্করের নাম প্রস্তাব করা হয়।
অথচ এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হতে আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জি কে মোস্তাফিজুর রহমান।
তৃণমূলের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে গিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফিজ বলেন, এখানে চেয়ারম্যান পদে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। জনগণ আমাকে চায়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরিস্থিতি যাই হোক নির্বাচন করব।
দল মনোনয়ন না দিলে এমনকি বহিষ্কার করলেও নির্বাচন থেকে সরে যাব না। প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসাইন। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ঢাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টুর নাম তালিকা পাঠানো হয়েছে।
এটি সঠিক হয়নি দাবি করে আনোয়ার বলেন, বরিশাল সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক ভিত তা আমি শক্তিশালী করেছি। তাই পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করব। দল মনোনয়ন না দিলেও আমার সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় তৃণমূল মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক দেওয়ানের বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়নের আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম জাহাঙ্গীর।
চরফ্যাশনে তৃণমূলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল উদ্দিন মহাজন।
মনপুরায় তৃণমূলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিনা চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ কাজল, জাকির হোসেন ও একএম শাহাজান।
এভাবে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় চারজন, কাঁঠালিয়া উপজেলায় চারজন, পটুয়াখালী সদর উপজেলায় পাঁচজন, দুমকি উপজেলায় তিনজন, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় দু’জন, বাউফল উপজেলায় চারজন, কলাপাড়া উপজেলায় ১২ জন এবং দশমিনা উপজেলায় তিনজন তৃণমূলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বরগুনা ও পিরোজপুরের ১২টি উপজেলাতেও একই ঘটনা ঘটেছে। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা বলেছেন।
একই দলের একাধিক নেতার নির্বাচনে নামার ঘোষণায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ কর্মী মিরাজ হোসেন বলেন, দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তৃণমূলে জটিলতায় পড়বেন সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা। এছাড়া দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি এবং সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কাও বাড়বে।
এ সম্পর্কে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, মার্কা নৌকা হওয়ায় আওয়ামী লীগের কারও বিরোধিতার কোনো সুযোগ থাকবে না। এছাড়া সাধারণ ভোটাররা নৌকায় ভোট দেবেন।
দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের কারও নামার অর্থ হল নৌকার বিরুদ্ধে নামা। এক্ষেত্রে দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ নিয়ে খুব একটা জটিলতা হবে বলে মনে করি না।