দখিনা হাওয়ায় কুসুম বনের বুকের কাঁপনে, চঞ্চল মৌমাছিদের ডানায়, পল্লব মর্মরে, বিবর্ণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠার সময়ে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান জানান দিচ্ছে- ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
বসন্তের আগমন টের পাওয়া যাচ্ছে গাছের দিকে তাকালেই। নতুন পাতা আর ফুলে ছেঁয়ে যাওয়ার দিন শুরু হলো বলে।এ এক অপার্থিব সৌন্দর্য! শীতে শীর্ণ গাছগুলো অনেক ঝরিয়েছে পাতা। ফাগুনের ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাসে অল্প অল্প উড়ছে ঝরা পাতাগুলো
বনে বনে ধ্বনিত হচ্ছে পাতা ঝরার গান। একটু ওমের পরশ পেতেই গাছের ডালে ডালে উঁকি দিচ্ছে নতুন পাতা, নতুন কুঁড়ি।বসন্তের আগমনে নবপত্রপল্লবে শোভিত হয়ে উঠছে বনরাজি, ফুলের বাগান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বনরাজির এই বসন্ত রূপকে বলেছেন, ‘এলো বনান্তে পাগল বসন্ত/ বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে, চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
এখন যেন শুধুই অপেক্ষা বসন্তের আগমনের।মাঘের শেষে বিকেলের সূর্যটা হেলে পড়েছে পশ্চিমে। ম্রিয়মাণ আলুথালু সূর্যের আলো এসে পড়েছে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান,শিশু পার্কের বেশ কিছু গাছে ফোটা ফুলগুলোর গায়ে।
রৌদ্রবতী সে ফুলের নাম রুদ্রপলাশ। এ ফুলের রং হয় সাধারণত লাল, পলাশের মতোই। কিন্তু এই দুর্লভ বাসন্তী রঙের রুদ্রপলাশগুলো দেখে শিহরিত হলাম।
বসন্তের ফুল পলাশ। এ দেশের অনেক জায়গায় ফোটে এই ফুল। শিমুল-পলাশকে বলা হয় বসন্তের প্রতীক। এই শিমুল ও পলাশের লাল ছাড়া হলুদ ফুলেরও দেখা মেলে এ দেশে।
বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের গার্ডেনে রয়েছে হলুদ পলাশের গাছ। সেখানে গেলে দেখা মেলে পাখি ফুল বা লাল ব্রাউনিয়ার।
আহা কী লাল থোকায় ঠাসা ফুলের মঞ্জরি! সবুজ পত্রপল্লবের ঘন পাতার মধ্যে যেন বাংলাদেশের পতাকা। সে উদ্যানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
তবে ফুলের অভূতপূর্ব স্ফুরণ চোখে পড়ে বরিশাল বা দখিনের উপকূলীয় অঞ্চলের ডোবাগুলোয় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে পানিয়া মাদারের গাছ ও রক্ত লাল বর্ণের ফুল। এছাড়াও রয়েছে প্রতিটি গাছে আমের মুকুল।
যেদিকে দু-চোখ পরে লাল-হলুদের সমরহে মুখর চারিপাশ।ফোটা ফুলের মধুনিতে ভোমরের পাশাপাশি আসে অতিথি পাখিরদল। আবার একটু গ্রাম অঞ্চলের দিকে গেলে দেখা মিলবে কলই শাক ও কাচা ধান গাছে সৃষ্ট সবুজের এক সৌন্দর্যের লীলাভুমি।