ঢাকার ধামরাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক রানী বিলকিস, আনিকা আক্তার ও যুগ্ম সমন্বয়ক পিয়াস মাহমুদসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী কমিটি থেকে একযোগে পদত্যাগ করেছেন। সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ধামরাই কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তারা।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ পদত্যাগের ঘোষণা দেন ও কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে পুনর্বাসন করার প্রতিবাদে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামনুল আহমেদ অনিক ও ধামরাই থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলামকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র সমাজের নেতারা।
এর আগে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার ধামরাই উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সাধারণ ছাত্র সমাজের নেতাকর্মীরা। মিছিল সমাবেশে মুখ্য সংগঠক ও যুগ্ম সমন্বয়কারীসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করার ঘোষণা ও সদ্য গঠিত আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন।
তাদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন ও আন্দোলনকারী ছাত্রদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিকে বারবার অবহিত করার পরও তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নামে ধামরাই উপজেলা ছাত্রলীগের এ পুনর্বাসিত কমিটি গঠন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ধামরাই পৌর শহরের ৯নং ওয়ার্ডের মো. উজ্জ্বল হোসেনকে ধামরাই উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করেছে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের হয়ে মাঠে কাজ করেছেন। তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তাদের আমাদের পাশে পাওয়া যায়নি।
এসব তথ্য-উপাত্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করার পরও তাকেসহ ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির অন্তর্ভুক্ত করে আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে। শুধু তাই নয়, আন্দোলন চলাকালে যারা আন্দোলন করেছেন তাদের অনেককে বাদ দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে সদ্য গঠিত কমিটি বাতিলের দাবি এবং আমরা মুখ্য সচিব ও সমন্বয়কসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ দাবি করছি।
এ ব্যাপারে মুখ্য সংগঠক আনিকা আক্তার বলেন, আন্দোলনের বিষয়টি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আমরা আপনাদের অবহিত করেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আমরা কাউকে পাশে পাইনি। তখন আমাদের কোনো বড় ভাই আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্ট করে আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
তখন ধামরাই পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লাল মিয়ার ছেলে উজ্জ্বল হোসেন ছাত্রলীগের পক্ষে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করেছি। এ সত্ত্বেও তাকেসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ওই উজ্জ্বল হোসেনকে আহবায়ক করে ১৯ ফেব্রুয়ারি ধামরাই উপজেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরই প্রতিবাদে আমাদের পদত্যাগ এবং ওই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা।
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়ক পিয়াস মাহমুদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছি। অথচ আমাদের মূল্যায়ন না করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য তাদের নিয়ে ধামরাই উপজেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা বারবার অবহিত করার পরও তারা আমাদের কথায় কাউকে বাদ দেয়নি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন বলে জানান ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন আহমেদ অনিক।