এপ্রিল ২৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ক্রিকেট খেলাধুলা জাতীয়

মাশরাফির কণ্ঠেও আরেকটি টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের কথা

কয়েক দিন আগেও শীর্ষ পাঁচে দেশিদের মধ্যে এক মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কেউ ছিল না। এখন অবশ্য তালিকাটা দেখলে কিছুটা চোখের শান্তি মিলবে। সর্বোচ্চ পাঁচ রান সংগ্রাহকের মধ্যে দুজন দেশি। তিনজন বিদেশি। ব্যাপারটা ফুটবলে গোলের হিসেবে ফেলতে পারেন ৩-২। মোট কথা, বিপিএলে বিদেশিদের সঙ্গে দেশিরা এখনো পেরে ওঠেননি। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজা তুলনায় যেতে নারাজ। তাঁর মতে বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেশিদের পার্থক্য শুধু আত্মবিশ্বাসে। সামর্থ্য একই।

বিপিএল এলেই প্রশ্নটি জীবন্ত হয়। বিদেশিদের সঙ্গে দেশিরা কেন পেরে ওঠে না? বিপিএলে আগের পাঁচ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকা দেখুন, সেখানেও বিদেশিদের সঙ্গে দেশিরা ৩-২ ব্যবধানে পিছিয়ে। ২০১২ সালে প্রথম টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান আহমেদ শেহজাদের। পরের টুর্নামেন্টে জায়গাটা নিলেন মুশফিক। ২০১৫ সালে তৃতীয় সংস্করণে আবারও বিদেশি—কুমার সাঙ্গাকারা। পরের বছর তামিম ইকবাল সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে সমতা আনলেন ২-২ ব্যবধানে। কিন্তু সর্বশেষ সংস্করণে সমতা থাকেনি। শীর্ষ রান সংগ্রাহকের শীর্ষ তিনেও ছিল না কোনো দেশি ক্রিকেটার।

এবার অবশ্য মুশফিকের কল্যাণে আবারও সমতায় ফেরার আশা এখনো টিকে আছে। শীর্ষে থাকা রাইলি রুশোর (১২ ম্যাচে ৫১৪ রান) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধীরে ধীরে বেশ জমিয়ে তুলেছেন মুশফিক (১২ ম্যাচে ৪১৮ রান)। যদিও দুজনের মধ্যে এখনো ৯৬ রানের বিস্তর ব্যবধান, টি-টোয়েন্টিতে ঘুচিয়ে ফেলা বেশ কঠিনই। তবে আশাও মরেনি। ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারলে মুশফিক হয়তো দেশি-বিদেশিদের ব্যবধানে (ছয় সংস্করণে শীর্ষ রান সংগ্রাহক) সমতা আনতে পারবেন ৩-৩ ব্যবধানে, কে জানে!

তবে এবার দেশিদের সেঞ্চুরি নিয়ে হাহাকার চলছে। শেষ চারের দামামা বেজে ওঠার আগেই পাঁচ সেঞ্চুরি দেখে ফেলেছে বিপিএল। এই পাঁচ সেঞ্চুরিই এসেছে পাঁচ বিদেশির ব্যাট থেকে। দেশিদের ব্যাটে তিন অঙ্কের দেখা নেই। শুধু তাই নয়, ব্যাটে ম্যাচ জেতানোর ক্ষেত্রে দেশিদের চেয়ে বিদেশিদের পারফরম্যান্সই বেশি করে নজর কেড়েছে।এবি ডি ভিলিয়ার্সের কথাই ধরুন, এই প্রোটিয়া রংপুর রাইডার্সে যোগ দিয়ে টানা রান করেছেন আর রংপুরও তাঁকে সঙ্গে জিতেছে সবগুলো ম্যাচ। সেই তুলনায় ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, আরিফুল হক, মুমিনুল হক, জাকির হাসান, মোসাদ্দেক হোসেনের মতো জাতীয় দলে খেলা তারকা ও তরুণেরা কতটুকু করতে পারছেন দলের জন্য, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

কাল সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি এই প্রশ্নেরই জবাব দিলেন এভাবে, ‘অবশ্যই তাদের (দেশি) ওপর চাপ সৃষ্টি করে লাভ নাই। এক বছর পর পর বিপিএল আসে, এই টুর্নামেন্টটা সহজও না। আমার এত দিনের অভিজ্ঞতা বলে এই টুর্নামেন্ট সহজ না। বিশেষ করে ঢাকায় যেহেতু সবচেয়ে বেশি খেলা হয় সেহেতু ঢাকার উইকেটে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে ব্যাটসম্যানদের। আমি কখনোই দেখি না কাজটা সহজ বা ভালোভাবে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে করা সম্ভব।

মাশরাফির দেশি ক্রিকেটারদের আগলে রাখার চেষ্টা নতুন নয় এবং তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট তো দেশি ব্যাটসম্যানদের কাছে হাতের তালুর মতোই চেনা। বিদেশিদের ক্ষেত্রে যেটি উল্টো। কিন্তু ঘটছে ঠিক উল্টোটাই— শেরেবাংলার অচেনা উইকেটে রান পাচ্ছেন বিদেশিরা, তাঁরা-ই জেতাচ্ছেন বেশির ভাগ ম্যাচ, আর দেশিরা? তাঁরা যেন ‘নিজ ভূমে পরবাসী’!

মাশরাফির যুক্তি, ওঁদের আরও সুযোগ দেওয়া হোক। এমন টুর্নামেন্ট আরও হোক। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক আসলে শাহরিয়ার নাফীস ও মুশফিকুর রহিমের কথায় সুর মিলিয়েছেন। আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হোক। যেখানে খেলবেন শুধু দেশি ক্রিকেটারেরা। তাহলে তরুণদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বলে মনে করেন মাশরাফি, ‘ওরা যদি আরও বেশি সুযোগ পায়, আমাদের দেশে যদি আরও একটা টুর্নামেন্ট হয়, যেটা নিয়ে কথা হচ্ছে কিছুদিন ধরেই, সেটা যদি চালু হয়, তাহলে যারা তরুণ আছে, অনেকেই আছে, আফিফ আছে, যারা ভালো প্রতিশ্রুতিশীল আর কি, তাদের এই সুযোগটা থাকবে। এমন টুর্নামেন্ট হলে ওরা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হবে।

শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, ওয়ানডেতেও স্নায়ুক্ষয়ী বেশ কিছু ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। বিপিএলেও স্নায়ুর চাপে হার মানতে দেখা যায় দেশের ক্রিকেটারদের। মোস্তাফিজুর রহমান এখানে ব্যতিক্রম। এবার বিপিএলে ‘ডেথ ওভার’-এ দুর্দান্ত বল করেছেন মোস্তাফিজ। রাজশাহী কিংস শেষ চারে উঠতে না পারলেও গ্রুপপর্বে শেষ ওভারে বল করার চাপ নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছেন মোস্তাফিজ। শুধু মোস্তাফিজ কেন, বিপিএলে এবার বোলিংয়ে অন্তত সন্তুষ্টির জায়গা আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। বিদেশি বোলাররা যে দেশিদের কাছে পাত্তাই পাচ্ছেন না। শীর্ষ পাঁচে কোনো বিদেশি বোলার নেই! আর শীর্ষ দশে বিদেশি মাত্র একজন—শহীদ আফ্রিদি।

অর্থাৎ দেশিদের খামতির জায়গাটা আসলে ব্যাটিংয়ে—টি-টোয়েন্টির প্রাণ আরকি। এই সংস্করণই তো ব্যাটসম্যানদের খেলা। মাশরাফি তাই আরও সুযোগ চান, ‘ওরা যদি আরেকটু খেলার সুযোগ পায় তাহলে বেশ কিছু টি-টুয়েন্টি খেলোয়াড় বের হওয়ার সুযোগ আছে। আমি তুলনায় যাব না। তবে আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় আছে।

প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় আছে তা সবাই জানে। তাঁরা সুযোগও একেবারে কম পাচ্ছেন না। কিন্তু সমস্যা একটাই, প্রতিশ্রুতিগুলো মাঠে সেভাবে অনূদিত হচ্ছে না। এখন না হলে আর কবে? কালে কালে বেলা তো কম হলো না!

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official