স্টাফ রিপোর্টার//হাসিবুল ইসলাম:
বরিশাল শহরে বেওয়ারিশ বা পথ কুকুরের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নগরবাসী। রাতের বেলায় শহরের একাধিক গলি দখল করে নিচ্ছে কুকুরের দল। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে কুকুরের ভয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকছেন পথচারীরা। শুধু পথচারীদের দেখেই নয়, চলন্ত যানবাহন দেখেও মাঝেমধ্যে ধেয়ে আসছে কুকুর গুলি। প্রায় প্রতিদিনই কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন একাধিক বাসিন্দা। কুকুরের আক্রমণ থেকে নিস্তার পেতে কুকুর নিধন অথবা জলাতঙ্ক মুক্ত করার দাবি উঠেছে শহরে।
তবে এনিয়ে বাসিন্দাদের কোন আশার বাণী শোনাতে পারছেন না সিটি কর্পোরেশন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, বেওয়ারিশ কুকুর বা পথ কুকুরের নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে ঘুড়ে ঘুড়ে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়ে। কুকুর মারা বা নিধণ করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্ষেধাজ্ঞা আছে। তাই শহরে ব্যাপক হারে বেওয়ারিশ ও পথ কুকুর বেড়েছে। তবে কুকুর কামড়ালে যাতে জলাতঙ্ক রোগ না হয় সে জন্য কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। যে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। সেই কুকুরকে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাগণ জানান, বেওয়ারিশ কুকুর বা পথ কুকুরের দৌরাত্ম্যের খবর শুনছি। তাদের ভ্যাকসিন দিয়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে কাজ চলছে। এই কাজ প্রাণি সম্পদ বিভাগ করে না। এই কাজ সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে হচ্ছে। সিটি মেয়র দপ্তর এনিয়ে কাজ করছে। ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে এলে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি।”
এদিকে শহরজুড়ে বিভিন্ন রাস্তায় দল বেঁধে কুকুরের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাতের শহর কুকুরদের দখলে চলে যাচ্ছে। কুকুরের দাপটে নিরাপদ নয় কেউ। স্কুলপড়ুয়া বাচ্চা থেকে, মহিলা, বয়স্কসহ অনেকেই কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
বরিশাল শহরের একাধিক বাসিন্দারা জানান, শহরের নাজিরপুল, নতুন বাজার, নথুল্লাবাদ, কালিবাড়ি রোড, শিতলাখোলা, চৌমাথা, পলাশপুর ও কেডিসি এলাকায় কুকুরের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি। রাস্তায় একা বেরিয়ে যখন তখন কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
বরিশাল শহরের বাসিন্দা নাদিম বলেন, পথ কুকুরের অত্যাচারে বাড়ির বাইরে বেরুনই আতঙ্কের ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে অনেকেই কুকুরকে খাবার দিয়ে যাচ্ছে। তাই কুকুরের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। কুকুরের কামড় খেয়ে অনেককেই ইঞ্জেকশন নিতে হচ্ছে। অনেক সময় সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়না। তখন প্রায় ২৬শ টাকায় ভ্যাকসিনের কোর্স কিনে দিতে হচ্ছে। এই ভ্যাকসিন কোর্স গরীব মানুষ কিনে দিতে পারেনা। তখন তারা ঝাঁড় ফুক ও কবিরাজের চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে করে ঝাড় ফুক ও কবিরাজের চিকিৎসা কোন কাজে আসছে না।
অপর এক বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, জলাতঙ্ক কামড়ানো কুকুর কামড়ালে ঝাড় ফুক বেকার হয়ে যাচ্ছে। কুকুর কামড়ানো মানুষের জলাতঙ্ক রোগ দেখা দিচ্ছে। এতে মৃত্যু অবধারিত। কুকুরে কামড়ালে কবিরাজ না দেখিয়ে, ঝাঁরফুক না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।
বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন জানান, কুকুর কামড়ালে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কুকুর কামড়ালে সেই ক্ষত স্থান সাবান দিয়ে দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর তাকে যতদ্রত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। তবে বাড়ির পোষা কুকুর কামড়ালে কুকুরের গতিবিধি লক্ষ্য করে যদি দেখা যায় কুকুরটি স্বাভবিক আচরণ করছে। সে ক্ষেত্রে র্যাবিক্স ভ্যাকসিন না দিলেও হয়। তবে কুকুরে কামড়ালে ভ্যাকসিন দেয়াটা ভালো।