বরিশালের বাজারে রোজার আঁচ লাগতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ইফতারসামগ্রীতে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, আদা, খেজুর কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নগরের সাধারণ মানুষ। এদিকে বরিশাল নগরে সাশ্রয়ী দামে টিসিবির পণ্য বিক্রিও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। বাজারে তদারকি না থাকায় এখানকার নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা চরম বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বরিশাল নগরের বাজার রোড, পোর্ট রোড, চৌমাথা, বটতলা, বাংলাবাজার, নতুন বাজার ঘুরে নানা পণ্যের দাম বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, রমজান আসছে, সামনে শবে বরাত। তাই রোজায় ব্যবহৃত পণ্যের দাম পাইকারিভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরের বাণিজ্যিক এলাকা বাজার রোড, পোর্ট রোডের একাধিক মুদিদোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজানে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সয়াবিন তেল প্যাকেটজাত পাওয়াই যাচ্ছে না। তবে খুচরা হিসেবে প্রতি লিটার সয়াবিন ১৮৫-১৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এই তেলই আবার নগরের অলিগলিতে ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। অথচ সয়াবিন তেলের মূল্য সরকারিভাবে লিটারপ্রতি (প্যাকেটজাত) ১৬৮ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার ধার ধারছে না কেউ-ই।
একইভাবে চিনি গত মাসের চেয়ে ১০ টাকা বেড়ে ৮৫, মসুর ডাল ১৫-২০ টাকা বেড়ে ১০০, ছোলা কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
রমজানের দরকারি পণ্য পেঁয়াজ নতুন উঠলেও দাম বেড়েছে। কেজি প্রতি পেঁয়াজ গত মাসের চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেড়ে ৪৫-৫০, আদা ২০ টাকা বেড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
পোর্ট রোড বাজারের মুদিদোকানি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, তেল, ডাল, পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন আড়তদারেরা। তাঁরা যে দামে কেনেন, সে অনুযায়ী বিক্রি করেন। রোজা আসছে, তাই এসব নিত্যপণ্যের দাম পাইকারিতেই বেড়ে গেছে।
অপর দিকে রমজান আসার আগেই খেজুরের দাম বেড়েছে। নগরের ফলপট্টির একাধিক দোকানি জানান, আমদানি করতে হয় তাই রমজান আসায় খেজুরের দাম ২০-৩০ টাকা কেজিতে বেড়েছে। তবে মুড়ির বাড়লেও চিড়ার দাম এখনো স্থিতিশীল।
বরিশাল জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহ সোয়াইব মিয়া জানান, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে তাঁরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। কোনো ক্রেতার কাছে পণ্যের দাম বেশি রাখলে তাঁরা লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।এদিকে নগরের সাধারণ জনগণের জন্য টিসিবির পণ্য সরবরাহ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ। যদিও রাজধানীতে টিসিবির পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে টিসিবির আঞ্চলিক প্রধান আল আমিন হাওলাদারকে ফোন দেওয়া হলেও ধরেননি তিনি।
নগরের টিসিবি ডিলার এনামুল হক বলেন, গত মাসের শেষ থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকায় চালু আছে। তিনটি ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য সরবরাহ হয়, তাতে না পাওয়ার লোকই বেশি। অপর ডিলার মো. রানা বলেন, রোজা আসছে, চালুর খুবই প্রয়োজন। রমজানে এই নগরে কমপক্ষে ১০টি ট্রাকে টিসিবির পণ্য দেওয়া দরকার।
অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, রমজান আসছে তাই পণ্যের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছেন। বাজারে তেমন কোনো তদারকি না থাকায় নগরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা যে টিসিবির পণ্য কিনবেন, সে সুযোগও নেই। পাইকারি ও খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল প্রতিবাদও জানাচ্ছে।