ঢাকায় সাতই মার্চের সমাবেশের মিছিলের মধ্যে বাংলামোটরে কলেজছাত্রীকে যৌন হয়রানির ভিডিও ফুটেজ হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, অপরাধীরা কোনোভাবে ছাড় পাবে না।
বুধবারের ঘটনা নিয়ে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ব্র্যাক স্কুল অব পাবলিক হেলথ’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাতই মার্চ বাংলামোটরে শিক্ষার্থীকে হয়রানির ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ হাতে এসেছে। কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল যুবক বাংলামোটরে এক কলেজ শিক্ষার্থীকে হয়রানি করেছিল।
“ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের আইডেনটিফাই করার চেষ্টা হচ্ছে, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারাও জানতে পারেন, কারা কারা এতে জড়িত।”
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বুধবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল। এই জনসভায় বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে যোগ দেন ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন ওয়ার্ড শাখা এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বাংলামোটরে এরকম একটি মিছিলের মধ্যে পড়ে একদল যুবকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা নিজের ফেইসবুকে এক তরুণী পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায় ফেইসবুকে।
ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী ওই তরুণী বিকালে পোস্টটি দেওয়ার পর তিন ঘণ্টায় তার শেয়ার ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অনেকেই সোচ্চার হন।
ওই তরুণী ফেইসবুকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন বলে তার ঘনিষ্ঠ একজন জানান।
এই কারণে তিনি প্রথমে পাবলিক স্ট্যাটাস দিলেও পরে তা ‘অনলি মি’ করে দেন বলে তা এখন আর সবাই দেখতে পারছেন না।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ এই ধরনের ঘটনার খবর ‘জানেন না’ বলে জানিয়েছেন।
কলেজ থেকে ফেরার সময় এই জনসভার কারণে বাস না পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাংলামোটরে আসার পর একটি মিছিলে থাকা একদল যুবক তাকে ঘিরে ফেলে যৌন নিপীড়ন করে বলে ওই তরুণীর অভিযোগ।
তিনি ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, ১৫-২০ জন যুবক তাকে যৌন নিপীড়ন শুরু করলে এক পুলিশ সদস্য তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দেয়। ক্ষোভের সঙ্গে ওই তরুণী লেখেন, এরপর তিনি বাংলাদেশেই থাকবেন না।
তার এই পোস্ট ব্যাপক শেয়ার হতে শুরু করে, বিভিন্নজন মন্তব্যও করে। এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনাও আসে নানাজনের মন্তব্যে। পরে নিজের পোস্ট সরিয়ে দেন তিনি।
পরে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন- “পোস্টটা অনলি মি করেছি কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দিইনি। প্লাস আমার কলেজকে জড়ানো হচ্ছিল এই ব্যাপারে। ব্যাপারটার সাথে আমার কলেজের কোনো সম্পর্ক নাই।”
তরুণী অভিযোগ তোলার পর পুলিশের নানা পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলেও কেউ সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি বুধবার রাতে।
পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক বদিউজ্জামান বলেন, এই খবর শোনার পর সত্যতা জানতে বাংলামোটর ও আশে পাশে দায়িত্বরত প্রায় ৪০ জন পুলিশ সদস্যের সাথে কথা হয়েছে তার। “তারা এ ধরনের ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে,” বলেছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেছিলেন, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমাদের পুলিশের কেউ এ বিষয়টি জানেন না বা কাউকে এ ধরনের সাহায্য করেনি। এছাড়া পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগও করেনি।”
তবে ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করতে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান তিনি। বাংলামোটরে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট মোরশেদুল আলম বলেন, তাদের যে সব সদস্য এখানে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের কাছে এই খবরের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন তিনি। “কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছে না,” বলেছিলেন তিনি।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, বুধবার রাতেই ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে আসেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
বুধবার রাজধানীর পথে এই ধরনের বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখে পড়ার কথা জানিয়ে আরও কয়েকজন নারী ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন।
এই ধরনের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নজরে যেগুলো এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘টেলিফোনে সাক্ষাৎকার দেবেন না’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, তার কাছে কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই। অন্য কোনো সংস্থার কাছে আছে কি না, তাও তার জানা নেই।
র্যাবের মহাপরিচালক মুফতি মাহমুদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ভিডিও ফুটেজ বা এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই।”