দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান মাস। এরইমধ্যে রোজার আঁচ পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সে আঁচে বাড়ছে সব ধরনের ডাল ও বেসনের দাম। গত কদিনে ডালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। একই হারে বেড়েছে বেসনের দাম। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি, তেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। আগে থেকে চড়া দামে বিক্রি হওয়া চালের দাম রোজা শুরুর আগে আরও কিছুটা বেড়েছে। ফলে চালের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প আয়ের মানুষের।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা ঘিরে একমাস আগে থেকেই বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। রোজায় ইফতারের অন্যতম উপকরণ ছোলা, বুটের ডাল, খেজুরের পাশাপাশি চাল, আটা, ময়দা দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। গত কদিনে ছোলা, বুটের ডাল, বেসনের দামও বেড়েছে। ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজারও।
এদিকে তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে সরকার সম্প্রতি ভোজ্যতেল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) কমিয়েছে। কিন্তু তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি তেলের বাজারে। এখনো অস্বাভাবিক দামেই বিক্রি হচ্ছে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরিবের মোটা চাল এখন বাজারে ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। মান অনুযায়ী মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। মাসখানেক আগেও মোটা চালের কেজি ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
মোটা চালের দাম নতুন করে খুব একটা না বাড়লেও চিকন চালের দামে আগুন। প্রতি কেজি চিকন চাল এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকায়। কিছুদিন আগেও এ চালের কেজি ছিল ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা। আর মাসখানেক আগে ছিল ৬২ থেকে ৬৬ টাকা। এছাড়া মাঝারি মানের চালের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, যা মাসখানেক আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকার মধ্যে।
চালের এ ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ে খিলগাঁও তালতলার ব্যবসায়ী জানে আলম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, এক মাস ধরেই চালের বাজার বাড়তি। গত কদিনে চিকন চালের দাম আরও বেড়েছে। কিছুদিন আগে রশিদের মিনিকেট ২৫ কেজির বস্তা ১ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন তা বেড়ে ১ হাজার ৬৫০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, কেজিতে দাম দুই টাকা বেড়েছে। অন্যান্য কোম্পানির মিনিকেট চালের দামও বেড়েছে। তবে গত কদিনে মোটা ও মাঝারি চালের দাম নতুন করে বাড়েনি।
বাজারটিতে চাল কিনতে আসা আলেয়া বেগম বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। কোনো কিছুই কেনার মতো নেই। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে আছে। চালের দাম কিছুটা কমলেও আমরা স্বস্তি পেতাম। এক কেজি চাল কিনতে ৫০ টাকার ওপরে লাগে। মাসের উপার্জনের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে চাল কিনতে। তাহলে বুঝেন আমরা কেমন আছি। রোজাও চলে এসেছে। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে রোজায় আমাদের কষ্ট আরও বাড়বে।
চালের এ বাড়তি দামের মধ্যে গত কদিনে ছোলা, বুটের ডাল, মশুরের ডালসহ বেসনের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বুটের ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকা। কদিন আগেও ১০০-১০৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ছোট দানার মশুর ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা। মাঝারি দানার মশুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০-৯০ টাকা কেজি।
অপরদিকে বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। আর খেসারির ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৭০ টাকার মধ্যে।
ডাল ও বেসনের এ দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. মনির জাগো নিউজকে বলেন, রোজার আর বেশিদিন বাকি নেই। সবাই এখন রোজার কেনাকাটা করছে। রোজার কারণেই ছোলা, বুটসহ বিভিন্ন ডালের দাম বেড়ে গেছে। সে কারণে বেসনের দামও বেড়েছে। আমাদের ধারণা সামনে দাম আরও বাড়বে। তবে ১৫ রোজার পর দাম কমতে পারে।
গত কদিনে আটা ও ময়দার দাম নতুন করে বাড়েনি। তবে আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া আটা-ময়দা ক্রেতাদের খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না। বাজারে খোলা আটার কেজি এখন ৪০ থেকে ৪২ টাকা এবং খোলা ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে।
এদিকে ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট কমালেও এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা এবং এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৮০ টাকা।
সয়াবিন তেলের এ দাম বিষয়ে সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী মো. হারুন পাটুয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, সরকার ভ্যাট কমালেও আমরা কম দামে সয়াবিন তেল কিনতে পারছি না। বোতলের সয়াবিন তেলের গায়ের মূল্য আগের দামেই আছে। তবে মাঝে বোতলের দাম খুব একটা পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন বোতলের তেল পর্যাপ্ত আছে। বোতলে যে দাম লেখা আছে আমরা সে দামই রাখছি। আর খোলা সয়াবিনের দাম পাইকারিতে কমেনি। আমরা যে দামে কিনে আনছি, তাতে ১৮০ টাকার নিচে বিক্রি করলে লাভ হবে না।
দুয়ারে রোজার মাস কড়া নাড়ায় ইফতারির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দামও নতুন করে বেড়েছে। গত কদিনে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে খেজুরের দাম। মান অনুযায়ী, খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
খেজুরের দাম বাড়ার বিষয়ে বাদমতলীর ব্যবসায়ী মো. শামছুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, রোজার কারণে খেজুরের দাম একটু বাড়তি। এক মাস ধরেই খেজুরের দাম বাড়ছে। গত কদিনে কেজিতে আরও ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। ১০-১৫ রোজা পর্যন্ত খেজুরের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। ১৫ রোজার পর দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।