পেটে ব্যথা এমনই এক অসুখ যা দেখা দিতে পারে একদম হুট করেই। ভালো মানুষটা কোনো কাজ করছেন কিংবা শুয়ে আছেন, হঠাৎই শুরু হলো পেটে ব্যথা! বেশিরভাগ সময়ে এই ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও কখনো কখনো তা অসহ্যও হয়ে ওঠে। পেটে ব্যথার প্রতিকারের আগে এর কারণ জানা জরুরি। ব্যথার ধরন দেখে বুঝে নিন এই পেটে ব্যথার কারণ কী হতে পারে।
পেটে ব্যথার কারণ
নানা কারণেই হতে পারে পেটে ব্যথা। এক এক কারণে ব্যথা এক এক জায়গায় হয়। তাই কোন কারণে পেটে ব্যথার ধরন কেমন হয় তা জেনে নেয়া জরুরি-
পেপটিক আলসার বা গ্যাসট্রিকের সমস্যায় পেটে ব্যথা হয়। সে ক্ষেত্রে এই ব্যথা পেটের উপরে মাঝখান দিয়ে শুরু হয়। পেটে কখনও চিনচিনে, কখনও জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা হয়। এর সঙ্গেই থাকে টক ঢেঁকুর, বমি ভাব। অনেক সময়ে খুব ঘাম হতে পারে।
অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের জন্য ব্যথা হলে তা হবে পেটের উপরে খানিক বাঁ দিক ঘেঁষে। এই ব্যথা খুবই তীব্র হয় আর পিছন দিকেও অনুভূত হতে পারে। এর সঙ্গে বমি ভাবও থাকতে পারে।
কিডনিতে পাথর বা কোনো সংক্রমণের কারণেও পেটে ব্যথা হয়। সেক্ষেত্রে ব্যথা হয় যে কিডনিতে ব্যথা হয়েছে সেই কিডনির দিকের পেটের উপরের অংশে আর পিছন দিকে। ব্যথাটা ক্রমেই নামে তলপেটের দিকে। এই ব্যথা খুবই তীব্র হয় আর মাঝে মাঝে ব্যথা ছাড়ে, আবার শুরু হয়। তার সঙ্গে বমি ভাব আর জ্বর আসতে পারে।
পেটে খুব ব্যথা করে যদি অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়ে থাকে তাহলে। এ ক্ষেত্রে নাভির মাঝখান থেকে ব্যথা তলপেটের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আপনি যদি হাত দিয়ে টেপেন তাহলে তীব্র চিনচিনে ব্যথা অনুভব করবেন।
পিত্তথলিতে পাথর থাকলে বা প্রদাহ হলে পেটে ব্যথা শুরু হয়। এই ব্যথা পেটের ডান দিকে আর পিছন দিকে ছড়ায়। এর সঙ্গে প্রচণ্ড বমি ভাব হতে পারে। পেটে চিনচিন করে ব্যথা, সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, জণ্ডিস আর খাবারে অরুচি হল এই ক্ষেত্রে প্রধান উপসর্গ।
মেয়েদের ক্ষেত্রে জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের নানা সমস্যা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রেও কিন্তু খুবই পেটে ব্যথা করে। তখন তলপেটের ব্যথার সঙ্গে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হতে পারে। সঙ্গে আসতে পারে হালকা জ্বর।
যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে তো পেট ব্যথার সম্ভাবনা খুবই বেশি। এক্ষেত্রে পেটজুড়েই ব্যথা আর পেট অনেকক্ষণ ভার ভার মনে হয়। কিছু করেই শান্তি মেলে না।
যদি কোনোভাবে ফুড পয়জনিং, বা বদহজম হয়, তার থেকেও পেট ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। আর সাধারণ আমাশয় হলে তো তলপেটে নাভির কাছে তীব্র চিনচিনে ব্যথার কথা আমরা সবাই জানি।
অন্ত্রে ক্যানসার হলেও খুবই পেটে ব্যথা হয়। এর সঙ্গে ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা তো থাকেই। আপনি খুব ঘেমে যেতে পারেন।
কী করবেন
যদি আপনি বোঝেন যে আপনার ব্যথাটি গ্যাসের ব্যথা তাহলে কিন্তু আপনি গ্যাসের ওষুধ খেতে পারেন। আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ওষুধ এনে রাখতে পারেন। সেটি খেয়ে নিন খুব ব্যথা হলে। এছাড়া কোনো ভালো সিরাপ খেতে পারেন। এগুলো করলে গ্যাসট্রিকের ব্যথা খানিক কমতে পারে।
যদি আমাশয় থেকে ব্যথা হয় সে ক্ষেত্রেও আপনি ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন। আর সঙ্গে অল্প অল্প করে লবণ-চিনির পানি খেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কোনো ভালো সিরাপ খান। ইসবগুল নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না খুব একটা। তাই পেট ব্যথাও আর হবে না।
পেটে ব্যথার কারণ যদি সাধারণ গ্যাস্ট্রিক না হয় তবে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ খান। আর নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে থাকা খুব দরকার। যদি পেট ব্যথার সঙ্গে বমি, জ্বর আসে তাহলে তা চিন্তার। না হলে সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে তাও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই।
পেটে ব্যথা হলে উপশমের জন্য অল্প অল্প করে গরম পানি খেতে পারেন। হট ব্যাগ গরম করে পেটের উপর দিয়ে রাখতে পারেন। এতেও উপকার হয়।
পেটের ব্যথা কমাতে হলে সবার আগে ঝাল ও মসলাদার খাবার খাওয়া কমান। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন আর ওজন ঠিক রাখুন। ব্যথা এমনিতেই অনেক কম হবে।