বছর শুরুতে দেশের সব বিভাগ ও জেলায় কোমলমতি শিশুরা নতুন বই হাতে পেলেও বরিশাল সদর ও গৌরনদী উপজেলার ৩৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো পায়নি অনেক বিষয়ের বই।
বিদ্যালয়গুলোর তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দু’চারটি বই হাতে পেয়েছে। কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে দুটি বই। আবার কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে চারটি। বাকি বইগুলো এখনো না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা।
প্রতিবছর বছরের শুরুতে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পেলেও এবছর বরিশালের ২টি উপজেলার কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছায়নি নতুন বই।
বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলায় ২ শ’ তিনটি ও গৌরনদী উপজেলার ১ শ’ ৩১টিসহ মোট ৩৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশিরভাগই বিষয়ের বই এখনো পায়নি শিক্ষার্থীরা।
বই না পাওয়ার হতাশা শুধু শিক্ষার্থীদের মাঝেই নয় বরং অভিভাবক ও শিক্ষকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা ভাবছেন সামনের পরীক্ষা নিয়ে।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতার কারণেই এখনো শিশুরা বই পায়নি। ফলে বই না পাওয়ায় ক্লাস করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল নব আদর্শ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি বই হাতে পেয়েছি। বই দুটি হলো, বাংলা ও বিজ্ঞান। বাকি বই এখনো পাইনি। একই অভিযোগ ক্লাসের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর।
সিসটারস ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুর অভিভাবক বলেন, বছরের শুরুতে নতুন বই নিয়ে শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার একটা আনন্দ থাকে শিশুদের মাঝে। কিন্তু এ বছর মার্চ মাসের এক সপ্তাহ প্রায় শেষ হলেও এখনো বিজ্ঞান বই পায়নি আমার মেয়ে।
বছরের ৩ মাস চলাকালীন বই না পাওয়ার হতাশা নিয়ে তবুও শ্রেণি কক্ষে হাজির হচ্ছে এই শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন স্কুলে কিছু পুরাতন বই দিয়ে এই চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে বলে জানান বেশিরভাগ স্কুলের শিক্ষকরা।
বরিশাল সদরের নব আদর্শ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খানম বলেন, আগের কিছু পুরাতন বই দিয়ে ক্লাস চললেও নতুন বইয়ের চাহিদা থেকেই যাচ্ছে।
শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর দুর্বলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নতুন বইয়ের আলোয় আলোকিত হবে এই শিক্ষার্থীরা।
সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই না পৌঁছানোকে অশনি সংকেত বলে দাবি করেন বরিশালের প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মহসিন-উল ইসলাম হাবুল।
তিনি বলেন, আর কিছুদিন পর যখন পরীক্ষার রুটিন দেবে তখন শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে। এটা খুবই ভয়াবহ বিষয়। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বই না পৌঁছানোর বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল লতিফ মজুমদার জানান, এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
বরিশালের ১০ উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় শতভাগ বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। বাকি দুই উপজেলায় যে বইগুলো এখনো শিক্ষার্থীরা হাতে পায়নি সেগুলো খুব শিগগিরই পেয়ে যাবে।