অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ফুটবলার গঞ্জালো হিগুয়েইন। ২০০৯ সালে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া হিগুয়েইনের। এক দশকের ক্যারিয়ারে দেশের জার্সিতে খেলেছেন ৭৫ ম্যাচ, করেছেন ৩১ গোল। খেলেছেন তিন-তিনটি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে করেছেন ৫ গোল। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সবশেষ হ্যাটট্রিকও তার। কিন্তু লোকে ব্যর্থতার জন্যই তাঁকে বেশি মনে রাখবে, কারণ তার জন্যই বেশকিছু শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে আর্জেন্টিনার।
হিগুয়েইনের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল। ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। এ ম্যাচে গোলের নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেন এই স্ট্রাইকার। ম্যাচের ৪ মিনিটের মাথায় গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও তা নষ্ট করেন তিনি! ২০তম মিনিটে আরও একটি দারুণ সুযোগ এল; কিন্তু হিগুয়েইন তালগোল পাকিয়ে সেটাও নষ্ট করেন। খুব কাছে গিয়েও বিশ্বকাপ জেতা হলো না আর্জেন্টিনার; বিশ্বকাপ জেতা হলো না মেসির।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ গোলদাতা হিগুয়েইন জাতীয় দলের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করার জন্য ব্যাপক সমালোচিত। যেমন ২০১৫ কোপা আমেরিকার ফাইনাল। বিশ্বকাপ ব্যর্থতা ভুলে আরও একটি আন্তর্জাতিক শিরোপার দ্বারপ্রান্তে আর্জেন্টিনা। কিন্তু বাগড়া দিলেন সেই হিগুয়েইন! নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য ব্যবধানে শেষ হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। শট নিতে এসে গোলপোস্টের বদলে বল আকাশে মারলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন! তার সেই ভুলের সুযোগ নিয়ে কোপার শিরোপা জিতে নিল চিলি।
পরের বছর কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরে আবারও শিরোপার দ্বারপ্রান্তে আর্জেন্টিনা। কিন্তু একাদশে আছেন হিগুয়েইন; গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি গোল মিস করবেনই! ম্যাচের শুরুতেই চিলির গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভোকে একা পেয়ে ফাঁকা গোলপোস্টে বল পাঠাতে পারলেন না এই স্ট্রাইকার। গোলশূন্য ম্যাচ গড়াল পেনাল্টি শ্যুটআউটে। সেই ম্যাচ অবশেষে জিততে পারেনি লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এছাড়া গত রাশিয়া বিশ্বকাপে একটি গোলও করতে পারেননি হিগুয়েইন। বরং গোলপোস্টের ওপর দিয়ে বল মারার ঘটনা ঘটিয়ে সমালোচিত হয়েছেন। আর্জেন্টিনা বিদায় নিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে।
এসব কারণে তার ওপর যে আর্জেন্টিনার ফুটবল ভক্তরা বেজায় ক্ষিপ্ত সেটা ভালো করেই জানেন হিগুয়েইন। তার কারণে দেশের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি যে বারবার আন্তর্জাতিক শিরোপা বঞ্চিত হয়েছেন, সেটাও জানেন তিনি। যে কারণে অবসর ঘোষণার সময় হিগুয়েইন বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনার জার্সিতে আমার সময় শেষ। গভীরভাবে ভেবে দেখলাম সময় শেষ হয়েছে। এখন জাতীয় দলের বাইরে থেকে সব দেখব। এতে অনেকেই খুশি হবেন। অনেক মানুষ সমর্থন দেওয়ার চেয়ে সমালোচনা করতেই বেশি পছন্দ করে। আমি মনে করি দেশের জার্সিতে নিজের যথাসাধ্য চেষ্টাই করেছি। অনেকে খুশি হবেন, আবার অনেকে নাও হতে পারেন, কিন্তু আমার সময় শেষ।