প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই ইনিংসে ৯৯ ও ১২১ রানের ইনিংস খেললেন।গত তিন মৌসুমে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রান করেছেন ১০৯২, ১১১৭ ও ৮৯৪।সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৩ সালে, ওয়ানডে ২০১১ সালে।
এক বর্ষপঞ্জিতে এক হাজার রান করা প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। কী সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে শুরু হয়েছিল শাহরিয়ার নাফীসের! একসময় বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবা হতো যাঁকে, তিনিই এখন যেন অতীত। তাতে শাহরিয়ারের দায় কতটা, কতটা বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির, সেই বিতর্ক করাও এখন অযথা। তবে ৩২ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ওপেনার এখনো জাতীয় দলে ফেরার আশা ছাড়েননি। গতবার প্রিমিয়ার লিগে ভালো করেও নজর কাড়তে পারেননি নির্বাচকদের। এবার আরও ভালো করতে চান। শুরুটা প্রত্যাশামতো না হলেও তাঁর টানা দুই ইনিংস আবারও ফিরিয়ে আনল আলোচনায়।
গত ম্যাচে ৯৯ রান করে আউট হয়েছেন, কলাবাগানের কাছে হেরেও গিয়েছিল তাঁর দল অগ্রণী ব্যাংক। কাল আবাহনীর মতো দলের বিপক্ষে ১১৯ বলে ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় ১২১ রান করলেন। এবারও পরাজিতের দলে শাহরিয়ার। ২০০৬ সালে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েও চলে গিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজার আড়ালে। ওই বছর যে মাশরাফি সারা বিশ্বেই ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (৪৯টি) হয়েছিলেন। কাল দুর্দান্ত ইনিংসের দিনে সেই মাশরাফি চার বলে চার উইকেট নিয়ে করলেন ডাবল হ্যাটট্রিক! শাহরিয়ারের কপালটাই বোধ হয় এমন!
২০০৬ সালে ওয়ানডে তিনটি সেঞ্চুরিসহ এক হাজার করা করা শাহরিয়ার এক যুগ পার করে এসেছেন সেই কৃতিত্বের। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দেখে হতাশা বাড়তেই পারে। কোথায় থাকার কথা ছিল, কোথায় পড়ে রইলেন। ২০০৭ বিশ্বকাপটা হতাশা মোড়ানো কেটেছিল তাঁর নিজের জন্য, যদিও ওই বিশ্বকাপ দল বাংলাদেশ খেলেছিল দারুণ। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছি; আগমণীবার্তা শুনিয়েছিলেন তামিম, সাকিব, মুশফিকরা। আর শাহরিয়ার তখন জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে গেলেন বিদ্রোহী আইসিএল লিগ খেলতে।
সেই পাপমোচন করে অনেক আগেই ঘরে ফিরেছেন। এর মধ্যে একবার জাতীয় দলে ফিরেওছিলেন। ২০১০ সালে টেস্ট দলে ফেরার পর ১৮ ইনিংসে মাত্র ৩ ফিফটি তাঁকে আবারও ছিটকে ফেলেছিল দল থেকে। জাতীয় দলের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ১৫ ওয়ানডেতে ৩ ফিফটি আর ২২.৯৩ গড় রঙিন পোশাকেও ভরসা জাগায়নি। ২০১১ সালের পর আর ওয়ানডে খেলেননি। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৩ সালে।
শাহরিয়ার আবার ফিরে গিয়েছিলেন নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করার মিশনে। গত মৌসুমে ফার্স্ট ক্লাস ও লিস্ট ‘এ’ দুই ধরনের ঘরোয়া ক্রিকেটেই দারুণ ফর্মে ছিলেন। গত বছর প্রিমিয়ার লিগে ১৫ ইনিংসে ৪২.৮৫ গড়ে করলেন ৬০০ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফর্মটা ছিল আরও দুর্দান্ত। ১২ ম্যাচে ৫৫.৮৭ গড়ে করেছেন ৮৯৪ রান। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে কিন্তু তিনি বেশ ধারাবাহিক। আগের দুই মৌসুমে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হাজার রান পেরিয়েছিলেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ১৭ ইনিংসে ৬৪.২৩ গড়ে করেছিলেন ১০৯২ রান। ২০১৫-১৬–তে ১২ ম্যাচে ৬২.০৫ গড়ে ১১১৭ রান। টানা তিন মৌসুমে ৬০-এর গড়ে রান করার পর টেস্ট দলে একটা সুযোগ পাওনা ছিল। পাননি।
এবারের প্রিমিয়ার লিগে শুরুটা প্রত্যাশামতো হয়নি। উইকেটে থিতু হয়ে ইনিংসটা যখন লম্বা করার কথা, তখনই আউট হয়েছেন বিশ-ত্রিশের ঘরে। কাল সেঞ্চুরি পেয়েও মনে হচ্ছিল আরও ক্ষুধার্ত। দল যে তাঁর ওপরে সওয়ার হয়ে ভালোই ছুটছিল ২৯১ রানের বড় লক্ষ্যের দিকে। কিন্তু শেষ ওভারে ৪ উইকেট হাতে রেখে ১৩ রান তুলতে হয়, এমন সহজ সমীকরণ মেলাতে পারেনি তাঁর দল। মাশরাফি যে দুই থেকে পাঁচ বলে তুলে নিলেন বাকি সব উইকেট!
শাহরিয়ারে সান্ত্বনা হতে পারে, টানা দুটি ইনিংস আবার আলোচনায় ফিরিয়ে আনল। জাতীয় দলে সজোরে কড়া নাড়তে আরও কিছু করে দেখাতে হবে, তিনিও নিশ্চয়ই জানেন। তবে আপাতত নির্বাচকদের অন্তত মনে করিয়ে দিলেন তো নিজের নামটা!