৭-ই মার্চ জোহরের নামাজের পর উদ্ভোধনী বয়ানের মাধ্যমে ঐতিহাসিক চরমোনাই মাহফিলের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে চরমোনাই মাহফিলের এই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
পীর সাহেব সৈয়দ রেজাউল করীম তার বয়ানের শুরুতেই সবাইকে ধন্যবাদ দেন এত কষ্ট করেও চরমোনাই মাহফিলে উপস্থিত হওয়ার জন্য। তিনি চরমোনাই মাহফিলের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমার আব্বাজান দাদাজানের সূত্রে বলতেন, আল্লাহভোলাদেরকে আল্লাহর পথ দেখানোই হলো চরমোনাই মাহফিলের উদ্দেশ্য। চরমোনাই মাহফিল আখিরাতের কামাইয়ের জন্য, দুনিয়া অর্জনের জন্য নয়। এখানে পার্থিব উন্নয়নের কোনো তদবির দেয়া হয় না। আমরা তদবির দিই না। কোনো তদবির দিতেও জানি না। আল্লাহর হুকুম মেনে চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করে পীর সাহেব বলেন, আল্লাহপাক মানুষকে তার ইবাদত করার জন্যই শ্রেষ্ঠ মাখলুক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। শুধু নামাজের নামই ইবাদত নয়, সর্বক্ষেত্রে মালিকের হুকুম মেনে চলার নামই ইবাদত। কেউ মাগরিবের নামাজ চার রাকাত আদায় করলে কি তার নামায হবে? হবে না। কারণ, আল্লাহর হুকুম হলো তিন রাকাত পড়া। এজন্য বেশি পড়ে লাভ হবে না। আল্লাহ যেভাবে তার হুকুম পালন করতে বলেছেন, সেভাবেই আদায় করতে হবে।
এরপর অন্যান্য আরো আলোচনা এবং দিকনির্দেশনা দিয়ে বয়ানের প্রথম পর্ব শেষ করে মাহফিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। বয়ানের শুরুতেই লাখো মানুষের স্লোগানে মুখরিত হয় কীর্তণখোলা নদীর প্রান্তর। লাখো মানুষের এ অংশগ্রহন যেন সত্যিই অবাক করার মত। মাহফিলের সূত্র থেকে জানাযায় পীর সাহেব দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ট বয়ান এবং আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করবেন। কেবল তৃতীয়, চতুর্থ বয়ান করবেন শায়েখে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। সর্বশেষ ১০ তারিখে আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এই বিশাল জনসমাগম।
মাহফিল সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, এ বছর মাহফিলে লোক সমাগম অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। মুসুল্লিদের জন্য নির্ধারিত চার মাঠ গত রাতেই কাণায় কানায় পুর্ন হয়ে গেছে। পঞ্চম মাঠ ঠিক করা হয়েছে গত রাতে যে মাঠও রাতের মধ্যে পুর্ন হয়ে গেছে বলে জানা যায়। মাহফিলে পীর সাহেবদের আধ্যাতিক বয়ান ছাড়াও প্রতিদিন কিছু ধারাবাহিক কার্যক্রম রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মাহফিলের দ্বিতীয় দিন সকাল দশটা থেকে উলামা মাশায়েখ সম্মেলন এবং মাহফিলের তৃতীয় দিন সারাদেশ থেকে আগত ছাত্রদের গন জমায়েত। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সকল অঙ্গ সংগঠনের ধারাবাহিক কর্মসূচি রয়েছে যেখানে সংগঠনের আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম জাতির উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনা মুলক বক্তৃতা প্রদান করবেন। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মেহমানরাও মাহফিলে ধারাবাহিক বয়ান বক্তৃতা করবেন বলে জানা গেছে।
বরিশালের চরমোনাইর এই বাৎসরিক মাহফিল কেবল এদেশেই নয় বিদেশেও আবেদন সৃষ্টি করতে পেরেছে। অনেক বিদেশী মেহমানদের সমাগম হবে এ মাহফিলে। বিদেশী বেশ কিছু ভিআইপি ধর্মীয় শায়েখ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মাহফিলে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। কওমি শিক্ষার সুতিকাগার ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার বেশ কয়েকজন শিক্ষক, সৌদি, কাতার, মিশর, বাহরাইনসহ অনেক দেশ থেকেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ মাহফিলে যোগ দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন মাহফিল সূত্র।
চরমোনাই এই বাৎসরিক মাহফিল দেশ ও জাতির কল্যান কামনায় বদ্ধ পরিকর রয়েছে সব সময়। মাহফিলের সর্বোচ্চ সফলতা কামনায় সবার প্রতি দোয়া চেয়েছেন পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম।