এপ্রিল ২৮, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ আদালতপাড়া প্রশাসন বরিশাল রাজণীতি

বরিশালে কষ্টি পাথরের মূর্তির জন্যই খুন হলো ইউপি চেয়ারম্যান নান্টু

অনলাইন ডেস্ক:

বরিশাল জেলার চাঞ্চল্যকর উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু হত্যা মামলায় এবার সন্ধেহর তীর উজিরপুর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল এর দিকে। হত্যা মামলায় তিনি ফেঁসে যেতে পারেন। ৬ আসামীর আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারে আবেদন করেছে।

এদিকে আদালতে আসামিদের দাখিলকৃত আবেদনপত্রগুলোর মাধ্যমে চেয়ারম্যান নান্টু হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তে নতুন করে মোড় নিতেপারে। বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে হত্যার পিছনের মূলরহস্য। ফেঁসে যাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল।

হত্যাকান্ডের প্রায় সাড়ে চার মাস পর আদালতের বিচারকের কাছে লিখিতভাবে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে থাকা জল্লা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন শাহ ও ছাত্রলীগ নেতা কাওসার সেরনিয়াবাত। তারা গ্রেফতার হওয়ার পরে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলো তা প্রত্যাহার চেয়ে নতুন করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

কাওসার সেরনিয়াবাদ ও মামুন শাহ তারা লিখিত জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, দুইটি কষ্টি পাথরের মূর্তি উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল নিয়ে মুর্তি আত্মসাৎ করে। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। নিহত চেয়ারম্যান নান্টুর সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালের মধ্যে দুটি কষ্টি পাথরের মূর্তি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান নান্টুকে খুন করা হতে পারে, এমন লিখিত জবানবন্দি দেয়।

জেল হাজতে থাকা এজাহারভুক্ত আরো ৪ আসামি শাকিল ইসলাম রাব্বি, আবদুল কুদ্দুস, দীপক বালা, ও হাদিরুল ইসলাম হাদি গত বছরের ৮ নভেম্বর একই আদালতে তাদের দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য পৃথকভাবে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের ছয়জনকে চারদিন আটকে রেখে অমানুষিকভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে বলেও বিচারককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশ তাদের প্রত্যেককে ক্রসফায়ার ও পরিবারের সদস্যদের আটক করে নির্যাতনের ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে বলেও উল্লেখ করেন।

আদালতের বিচারক মোঃ এনায়েত উল্লাহ্ আসামিদের আবেদনপত্রগুলো আমলে নিয়ে শুনানির তারিখ ধার্য রাখেন।

আসামি দীপক বালা তার লিখিত জবানবন্দিতে বলেন, উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পালের উপস্থিতিতে উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল তার সাথে সাক্ষাত করে তাকে (দীপক) মামলা থেকে রেহাই দেয়ার প্রলোভন দেখায়। চেয়ারম্যান ইকবাল তাকে রাব্বি, টিটু, শেখর চৌধুরী, কাওসার সেরনিয়াবাত, মিরাজ সেরনিয়াবাত, হাদি, মামুন শাহ্ এই নামগুলো মুখস্ত করিয়ে বলেন নান্টুর হত্যার বিষয়ে কেউ জিজ্ঞেস করলে এই নামগুলো বলবি। স্বাক্ষর চাইলে স্বাক্ষর করবি। তোর কোন ভয় নাই। তোর জন্য যা কিছু করা দরকার আমি করবো।

শাকিল ইসলাম রাব্বি আবেদনে উল্লেখ করেন, হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) হেলাল উদ্দিনসহ একদল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত বছরের ৪ নভেম্বর ঢাকা ছাত্রলীগের কার্যালয় থেকে তাকে আটক করে। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে যায় রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে পুলিশ তার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ও চোখ মুখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে হাতিরঝিলে নিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়।

শাকিল ইসলাম রাব্বি আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, তাকে বরিশালে এনে একটি রুমে আট রেখে নগ্ন করে ইলেকট্রিক শর্টসহ শারিরিক নির্যাতন চালায়। তখন উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পাল তাকে (রাব্বি) বলে, এখন আমরা যেভাবে বলবো সেভাবেই স্বীকারোক্তি দিবি। অন্যথায় রিমান্ডে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানের নামে নান্টু যেখানে মারা গেছে সেখানেই তোকে ক্রসফায়ার দেবো।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) হেলাল উদ্দিন বলেন, আসামিদের নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ (মিথ্যা) অস্বীকার করে।মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান। ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলেই চার্জশীট প্রদান করা হবে।

এব্যাপারে উজিরপুর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কোন বক্তব্য বা মন্তব্য করতে এই মূর্হুতে রাজিনা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে নয়টার দিকে অজ্ঞাতনামা দুইজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলযোগে এসে উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কারফা বাজারের নিজ কাপড়ের দোকানে জল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর রাতে নিহত পিতা শুখলাল হালদার বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ৩২ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরও আটজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত ২০ আসামি বর্তমানে বরিশাল জেল হাজতে রয়েছেন।

এ হত্যাকান্ডের সাথে জরিত থাকা মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বাসিন্দা রবিউল ইসলামকে গত বছরের ১৩ নভেম্বর রাতে পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে পুলিশের দাবী।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official

সোলাইমান সেলিম-জ্যোতি তিনদিনের রিমান্ডে

banglarmukh official

চাচা ডেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুরকে বিয়ে করেন ফরিদা

banglarmukh official