চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৯৮ কোটি মার্কিন ডলার) কমেছে। অন্যদিকে সাধারণ ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি উভয়ই গড়ে কমলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে এনবিআর’র রাজস্ব আয়।
চলতি বছরের বাজেট বাস্তবায়নের ওপর প্রথম তিন মাসের প্রান্তিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে গতকাল (শনিবার) ‘বাজেট বাস্তবায়ন ২০১৮-১৯ : প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামস্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এনবিআর’র রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১২.৯ শতাংশ। তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ২.৩২ শতাংশ কমেছে, আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩.২১ এবং রফতানি আয়ও বেড়েছে ১.২৮ শতাংশ।
বৈদেশিক রিজার্ভের বিষয়ে প্রতিবেদনে মন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মোটামুটি স্থিতিশীল, যা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ছিল ৩ হাজার ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার (৩১.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং যা দিয়ে ৬.৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্য তুলনামূলক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ চলতি বছর প্রথম প্রাপ্তিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৮ কোটি মার্কিন ডলার কম।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে অবচিতি হয়েছে ৩.৬৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বর ২০১৭ শেষে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ৮৩.৭৫ টাকায়, বিগত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮০.৮০ টাকা। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার এই অবচিতি রফতানি ও প্রবাস আয়কে উৎসাহিত করবে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সাধারণ ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে উভয়ই কমেছে। স্বাভাবিক সরবরাহ পরিস্থিতি, সহায়ক মুদ্রানীতি এবং বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের কম মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য হ্রাস পাওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গড়ে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.১২ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৮৭; চলতি অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে তা কমে যথাক্রমে ৫.৬৮ ও ৬.৭৪ তে নেমেছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৩.৪৪ থেকে বেড়ে চলতি অর্থবছর ৪.০৭ এ দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে তুলনামূলক শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ।
মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এনবিআর’র রাজস্ব আয় ১২.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে ১০.৩৮ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল মোট বরাদ্দের ১০.২ শতাংশ। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৭.৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ এডিপি বাস্তবায়ন কমেছে ২.৩২ শতাংশ।
এডিপির সামগ্রিক বরাদ্দ ও বাস্তবায়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয় বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.২ শতাংশ কমেছে। রফতানি আয় বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ৮.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৯.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৭৫ শতাংশ, বিগত অর্থবছরে যা ছিল ৭.৬১ শতাংশ।
এছাড়া আমদানি ব্যয় ১১.৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, বিগত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৮.৩৯ শতাংশ। ব্যক্তিখাতে ঋণপ্রবাহ ১৪.৬৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রবাস আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৭৩ শতাংশ। বিগত অর্থবছরের একই সময়ের প্রবাস আয় প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।