প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে করা মামলায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান ও আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। এদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, যাদের মধ্যে শফিক রেহমানও আছেন।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী শুনানি শেষে এই অভিযোগ গ্রহণ করেন। শফিক রেহমান ছাড়া যাদেরকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা হলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস এর সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জানান, শুনানির সময় মাহমুদুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শফিক রহমান উপস্থিত না হতে পারায় সময় আবেদন করা হয়। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত আদালতে উল্লেখিত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মামুনের ছেলে রিজভী আহাম্মেদ যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন এবং পরে তা অন্য আসামিদের সরবরাহ করেন। আর প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এই ষড়যন্ত্রে অর্থ যোগানোর পাশাপাশি পরামর্শদাতা হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
মামুন জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি এখনও সে দেশেই বসবাস করেন। জয়ের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত গোপন তথ্য পেতে এফবিআইএর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ২০১৫ সালে মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে কারাদ- হয়েছে। এই ঘটনাটি বাংলাদেশে প্রকাশ পেলে তোলপাড় হয়। তখন জয়ও বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দেন। বলেন, যারা এই চক্রান্তে জড়িত, তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সাজা পাওয়া বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ সিজার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথি অনুযায়ী জয়ের ব্যক্তিগত তথ্য তিনি বাংলাদেশি এক সাংবাদিককে দিয়েছিলেন এবং এর বিনিময়ে ৩০ হাজার ডলার পেয়েছিলেন।
২০১৫ সালের ৪ আগস্ট ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান এ বিষয়ে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। এতে জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র আনা হয়। মামলায় বলা হয়, জাসাসের সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন এবং দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। ‘প্রাপ্ত তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবননাশসহ যে কোনো ধরনের ক্ষতির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন।
এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বিএনপির হাইকমান্ড দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অর্থায়ন করছে।’ ২০১৬ সালের এপ্রিলে শফিক রেহমানকে তার ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তার বাসা থেকে জয় সংক্রান্ত কিছু তথ্য ও গোপনীয় নথিও পাওয়া গেছে। পাঁচ মাস পর উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পান শফিক রেহমান। অন্যদিকে দৈনিক আমার দেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারের কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে তাকে জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই বছরের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমান জামিনে মুক্তি পান।