29 C
Dhaka
এপ্রিল ২৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

ওয়ারিশ ঠকানো ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না

তৃতীয় তারাবির কোরআন তেলাওয়াতে হাফেজ সাহেবরা শোনাবেন সূরা আলে ইমরানের ৯১ নম্বর আয়াত থেকে সূরা নিসার ৮৭ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। আজকের তেলাওয়াতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ওয়ারিশদের অধিকার ও মৃতের সম্পদ বণ্টন। কেউ মারা গেলে তার সম্পদের কতটুকু কে পাবে এর বিস্তারিত আলোচনা থাকছে সূরা নিসার বিভিন্ন আয়াতে।

 

মৃতের সম্পদ আল্লাহর করা আইন অনুযায়ী ওয়ারিশদের মাঝে ভাগ হওয়া ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। সাধারণত দেখা যায় বিভিন্ন বিধানের মূলনীতিটা আল্লাহতায়ালা নিজে কোরআনে বলে দিয়েছেন। পরবর্তীতে সেগুলোর শাখাগত খুঁটিনাটি বিধান আল্লাহ নিজে সরাসরি না বলে নবীর মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন। কিন্তু মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টনের শাখাগত প্রায় সকল খুঁটিনাটি বিধানসমূহ নবীর মাধ্যমে না শিখিয়ে মহান আল্লাহ নিজে সরাসরি শিখিয়েছেন। আত্মীয়ের নাম নিয়ে নিয়ে বলে দিয়েছেন কে, কতটুকু পাবে।

 

 

মৃতের সম্পদ বণ্টনের পর মহান আল্লাহ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘উহা (মৃতের সম্পদ বণ্টনের এ আইন) আল্লাহর সীমানা। যে আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করবে (আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মৃতের সম্পদ বণ্টন করবে) তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশে নদ-নদী প্রবাহিত। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। উহা মহা সফলতা। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হবে, আল্লাহর (ওই) সীমানা লংঘন করবে (মৃতের সম্পদ আল্লাহর আইন মতো বণ্টন না করে, নিজের খেয়াল-খুশি মতো বণ্টন করবে) আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সে তাতে চিরকাল থাকবে। উহা লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’

 

আজকের তারাবির পর প্রত্যেকেরই বিশেষ কর্তব্য হবে, নিজের অতীত মিলিয়ে নেওয়া। পরিবারের অতীত মৃতদের সকল সম্পদ কি আল্লাহর আইন অনুযায়ী ঠিক ঠিকভাবে বণ্টন হয়েছে! যদি হয়ে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি না হয়ে থাকে তাহলে এখনই সংশোধন করতে উদ্যোগী হই। মৃতের সম্পদ বণ্টনে আল্লাহর আইন অমান্য করার জন্য, ওয়ারিশ ঠকানোর জন্য শুধু তওবা যথেষ্ট হবে না। তওবার আগে ওয়ারিশদের হক ফিরিয়ে দিতে হবে। আর ওয়ারিশদের হক ফিরিয়ে তাদের মন খুশি করার আগ পর্যন্ত ফরজ-নফল কোনো ইবাদত কবুল হবে না। নামাজ-রোজা-তারাবি-হজ কোনো ইবাদত কবুল হবে না। জাকাত-ফেতরা-সদকা-দান-খয়রাত কোনো অনুদান কবুল হবে না।

 

কোনো মুসলমান মারা গেলে তাকে কবরস্থ করার পর পর তার আত্মীয়দের প্রথম কর্তব্য হলো- তার সম্পদের বিষয়ে পারিবারিক পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এক্ষেত্রে মৃতের পরিবারের যিনি অভিভাবক মূলত: প্রধান দায়টা তার ওপর বর্তায়। কিন্তু আমাদের দেশে মৃতের সম্পদের ক্ষেত্রে এটা হয় প্রথম ভুল। কবরস্থ করার পরপরই এ বিষয়ে পরামর্শে বসা হয় না। অনেক পরিবারে দেখা যায় বিশ বছর-ত্রিশ বছর হয়ে গেছে তাও সম্পদ বণ্টন করা হয়নি। অথচ দায়িত্ব ছিল কবর দিয়ে এসেই সম্পদ বণ্টন করা।

 

মৃতের সম্পদ বণ্টনের প্রচলিত আরও কিছু ত্রুটি

১. বোন, ফুফুদের জমির অংশ না দেওয়া। নামে কিছু দিলেও কিনে রাখা হয়, আবার সঠিক বাজারমূল্যও দেওয়া হয় না। নামমাত্র পরিমাণে অনেক অনেক কম মূল্য দেওয়া হয়।

 

২. বোন, ফুফুরা পিতার ওয়ারিশ দাবি করলে খারাপ নজরে দেখা হয়। তাদের মন্দ ভাবা হয়। অথচ এটা তাদের হক। আল্লাহ প্রদত্ত পাওনা। নিজের পাওনা দাবি করা কি কোনো অন্যায়?

 

৩. বোন, ফুফুদের আতিথেয়তা, ঈদের উপহার ইত্যাদিকে ওয়ারিশের বিনিময় গণ্য করা হয়। অথচ পিতা মারা যাওয়ার সাথে সাথেই বোন, ফুফুদের পুরোপুরি ভাগ তাদের ভোগদখলে বুঝিয়ে দিতে হবে। আবার এর পরেও তারা বেড়াতে আসলে তাদের আতিথেয়তা করতে হবে, সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদে তাদের উপহার দিতে হবে। আতিথেয়তা আর ঈদের উপহার এটাতো পিতার ওয়ারিশ নয়। এটা হলো ভাই-বোনের সম্পর্কের হক, ফুফু-ভাতিজার সম্পর্কের হক।

 

৪. বোন, ফুফু ওয়ারিশ দাবি করলে তাদের ওয়ারিশ দিয়ে দিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক চ্ছিন্ন করা হয়। অথচ ওয়ারিশ দিয়ে দেওয়া ফরজ আবার সম্পর্ক রক্ষা করাও ফরজ। ওয়ারিশ দেওয়ার পরেও বোন-ফুফুর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতেই হবে।

 

৫. স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী যদি অন্যত্র বিবাহ বসে তবে তাকে তার মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ দেওয়া হয় না। অথচ এটা বড়ো জুলুম। মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ পাওয়ার জন্য তো মহান আল্লাহ বিধবা থাকার শর্ত জোড়ে দেননি। তাই অন্যত্র বিবাহ বসলেও সে তার পূর্বের মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ পুরোপুরিই পাবে।

 

৬. স্থাবর সম্পদ ভাগ করা হলেও অস্থাবর সম্পদ ভাগ করা হয় না। আগে থেকে যার দখলে যেটা ছিল সে সেটা রেখে দেয়। এটাও অন্যায়। সম্পদ বণ্টনের পরামর্শ সভায় সবকিছু উপস্থিত করতে হবে। স্থাবর সম্পদের মতো অস্থাবর সম্পদও আল্লাহর আইন অনুযায়ী ভাগ হবে। সে বস্তু ভাগ করা যায় না, বা ভাগ করলে তা ব্যবহার উপযোগী থাকে না সেই বস্তু ওয়ারিশদের ভেতরে বা বাইরে নিলামে বিক্রি করে যে পরিমাণ মূল্যই পাওয়া যাবে তা-ই ভাগ করতে হবে।

 

৭. মৃতের ব্যবহারের জিনিষপত্র ভাগ না করে কোনো মিসকিনকে দান করা হয় বা স্মৃতি হিসেবে কেউ রেখে দেয় বা বরকত হিসেবে কেউ রেখে দেয়। এটাও ভুল। মৃতের সম্পদের সামান্য-বেশি কোনোঅংশই কাউকে দান করা যাবে না, স্মৃতি রক্ষার জন্য, বরকত হাসিলের জন্য কাউকে দেওয়া যাবে না। সব ভাগ করতে হবে। ভাগে যিনি পাবেন তিনি ইচ্ছে হলে দান করবেন বা অন্য কিছু করবেন।

 

৮. ওয়ারিশদরর মধ্যে শিশু থাকলে তার ভাগ আলাদা করা হয় না। বড়োরা নিজের মতো করে ভোগ করতে থাকে।

 

৯. মেয়েকে ঠকানোর জন্য পিতা ছেলেদের নামে সম্পদ লিখে দেয়ে, এটাও অন্যায় ও গোনাহের কাজ।

 

১০. অনেকে সময় আল্লাহর বণ্টনকৃত ভাগ থেকে ভাতিজাদের বঞ্চিত করার জন্য ছেলে না থাকলে মেয়েদের নামে সম্পদ লিখে দেয়। এটাও পাপের কাজ। সর্বাবস্থায় আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official