বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, অর্ধশত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত ঝালকাঠির নেছারাবাদ কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা মুহম্মদ আযীযুর রহমান নেছারাবাদী কায়েদ সাহেব হুজুর (রহ.) এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার।
২০০৮ সালের এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ঢাকাস্থ কমফোর্ট হাসপাতালে হুজুর বার্ধক্য জনিত কারণে মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে কবর পথের যাত্রী হন।
হুজুর কেবলার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের সদস্যরা যেমনি শোকাহত, তেমনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অগণিত মুসলিম ও অমুসলিম নর-নারীর চোখের পানিতে তার জন্য কায়েমেনাবাক্যে মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা জানান। হুজুররে গোটা জীবনটা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য নিবেদিত ছিল।
এ ব্যক্তি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ অনুযায়ী ১৩৩২ হিজরি সনে ঝালকাঠি জেলার বাসন্ডা (বর্তমান নেছারাবাদ) নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হুজুর কেবলার জীবনের সমগ্রটাই মানবকল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ছিলেন অসংখ্য গুণের অধিকারী ছিলেন।
তিনি মুসলমানদের ইসলামের সঠিক দিশা পাইয়ে দিতে আমরণ চেষ্টা করেছিলেন। দেশের আলেমরা যখন আলেমদের শত্রুতে পরিণত হয়েছিল, তখন হুজুর কেবলা আলেমদের তথা সমগ্র মুসলমান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তার বিখ্যাত দার্শনিক মত ‘আল ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ’ তথা মতানৈক্যসহ ঐক্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন ছারছীনা শরীফের মরহুম শাহ নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.) এর মানসপুত্র। হজরত কায়েদ সাহেব হুজুর ছিলেন সব সময় সকল ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। নাস্তিকতা, দেশদ্রোহ, ভন্ডামি, দুর্নীতি-দুষ্কৃতি, অত্যাচার, অবিচার, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
তিনি সব ধরনের ইহুদি পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় বিদেশি পণ্য বর্জন এবং দেশি পণ্য ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। হজরত কায়েদ সাহেব হুজুর (রহ.) দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বের এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সরাসরি রাজনীতি না করলেও রাজনীতি সম্পর্কে এমন কতগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। হুজুর সব ব্যাপারে শিথিল পন্থা এবং চরমপন্থা পরিত্যাগ করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
দুর্নীতি প্রতিরোধ, অশ্লীলতা পরিহার, বেদায়াত উৎখাতসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তার আন্দোলনের ফলে সাবকে প্রেসিডেন্ট আঃ সাত্তার সমগ্র বাংলাদেশ থেকে আনন্দ মেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি অনেক সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হিজবুল্লাহ দারুল কাজা (সালিশি আদালত বা বিচার বিভাগ), ছাত্র হিজবুল্লাহ, আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন কমিটি, হিজবুল্লাহ শ্রমিক সমিতি, তোলাবায়ে হিজবুল্লাহ, হিজবুল্লাহ দুর্নীতি উচ্ছেদে কমিটি (১৯৭৩) এবং আনজুমানে ইত্তিহাদুল মুসলিমিন (মুসলিম ঐক্য সংস্থা ১৯৬৭)।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের সব মুসলমানের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন ‘বাংলাদেশ হিজবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলিহিন (৩ জানুয়ারি ১৯৯৭, ইসলামী ঐক্য সংগঠন)। হুজুর ছিলেন সাহিত্যানুরাগী ও সংস্কৃতিমনা। ইসলামের খেদমতে তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইসলামের ভ্রান্তবাদীদের তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে সমালোচনা করে তাদেরও সঠিক ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য আহ্বান করেছেন। হুজুরের রচনাবলির প্রতিটি লাইন মানুষের জীবনের এককেটি নির্দেশনা। হুজুরের মৃত্যুর পর তার লিখিত গ্রন্থাবলির মর্ম উপলব্ধি করে নেছারবাদ দারুত্তাছনিফ সেগুলোকে পুস্তকাকারে বাজারে ছেড়েছে যাতে তার লেখনী জাতির মঙ্গলে আসে।
হুজুরের অসংখ্য রচনাবলির মধ্যে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিচয় ও আকাঈদ, ইসলাম ও তাসাউফ, ইসলামী জিন্দেগি, তাজভিদুল কোরআন, ছোটদের কিরাত শিক্ষা, আজকারে খামছা, দোজাহানের সম্বল, ইসলাম ও রাজনীতি, ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ও উহার পথ এবং মুসলমান এক হও।