28 C
Dhaka
এপ্রিল ২১, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ বরিশাল স্বাস্থ বার্তা

বরিশালে করোনা ল্যাবের দায়িত্ব দেয়ায় আতঙ্কে চাকরী ছাড়ছেন ডাক্তার!

বর্তমান বিশ্বে আতঙ্কের নাম কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। যা এক জনের শরীর থেকে খুব সহজেই অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজী বিভাবে একটি অত্যাধুনিক পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন সংযোজন করা হয়েছে।

তবে ভাইরোলজী বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রায় পাঁচ বছর পর বিভাগটির কার্যক্রম চালুর জন্য করোনা ভাইরাস পরীক্ষার পিসিআর মেশিন সরবরাহ হলেও ব্যবস্থা করা হয়নি চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান বা প্রয়োজনীয় জনবলের।

তাই দেশের সংকটময় মুহূর্তে বিভাগটির কার্যক্রম চালিয়ে যাবার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাইক্রোবায়োলজী বিভাগকে। এজন্য কোভিড পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এ বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে।

আর সেই আতঙ্কের কারণেই স্বেচ্ছায় চাকুরি থেকে অবসর গ্রহনের আবেদন জানিয়েছেন মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম.টি জাহাঙ্গীর হুসাইন। গত ৩০ মার্চ পিসিআর মেশিনটি শেবামেকে পৌঁছাবার পর পরই তিনি চাকুরি থেকে অবসরকালিন ছুটি (এলপিআর) এ যেতে লিখিত আবেদন করেন। তবে চলমান করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার স্বার্থে তার ওই আবেদনটি গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) সূত্রে জানাগেছে, ‘প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে একই আদেশে শেবামেকসহ দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন ভাইরাস পরীক্ষার জন্য ভাইরোলজী বিভাগ সংস্থাপন করা হয়। কিন্তু বিভাগটি সংস্থাপনের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি শেবামেকের ভাইরোলজী বিভাগের পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যক্রম। নামে বিভাগ থাকলেও ইতিপূর্বে প্রস্তুত করা হয়নি নির্দিষ্ট কোন কক্ষও। এমনকি বিভাগটিতে পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যক্রম চালুর জন্য জোরালোভাবে উদ্যোগীও হয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

তবে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর পরই ভাইরোলজী বিভাগটিতে কার্যক্রম শুরু করতো তোরজোড় শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনকি ঢাকা সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর থেকে গত ৩০ এপ্রিল করোনা ভাইরাস পরীক্ষার অত্যাধুনিক পিসিআর মেশিন সরবরাহ করা হয় শেবামেকে। তার আগেই মেশিন স্থাপনের জন্য কলেজের একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষ প্রস্তুতের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে প্রতিদিন সকাল থেকে রাতভর পর্যাপ্ত শ্রমিক দিয়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কক্ষটি সংস্কার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সর্বশেষ শুক্রবার দিনভর কাজ করে কক্ষটিতে টাইল্স এর কাজ শেষ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরোলজী বিভাগে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সূত্রে জানাগেছে, ‘ভাইরোলজী বিভাগ চালু করা হলেও বিভাগটিতে কোন জনবলের ব্যবস্থা করা হয়নি। বিভাগটিতে একটি মাত্র সহকারী অধ্যাপকের পদ থাকলেও তা শুরু থেকেই শূণ্য। নেই টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় জনবল। ‘জনবল না থাকায় আপাতত মাইক্রোবায়োলজী বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু জন্য।

কিন্তু বিভাগটির দায়িত্ব নিতে নারাজ মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এমটি জাহাঙ্গীর হুসাইন। শুরু থেকেই তিনি এ নিয়ে বিরোধীতা করলেও শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসেনি। এজন্য করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষায় স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণের আবেদন করেছেন তিনি।

মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আকবর কবির বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব ভাইরোলজী বিভাগে কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য। গণপূর্ত বিভাগ কক্ষটি বুঝিয়ে দিলেই সেখানে পরীক্ষার কাজ শুরু হবে। সে জন্য আমরা প্রস্তুতিও নিয়েছি। তবে মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের প্রধানের স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন সম্পর্কে জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

তবে মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম.টি জাহাঙ্গীর হুসাইন স্বেচ্ছায় অবসরে যাবার সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার চাকুরির মেয়াদ আছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কারণে পরিবারের চাপের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহনের আবেদন করেছি। কিন্তু মাইক্রোবায়োলজী বিভাগেও জনবল নেই। আমি এবং অপর একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছে। আমি অবসরে গেলে এই মুহুর্তে সে ভয় পেতে পারে বলেই পরে আবার সিদ্ধান্ত পাল্টেছি। আর কর্তৃপক্ষও এই পরিস্থিতিতে আবেদনটি গ্রহন করেননি।

তিনি বলেন, ‘ভাইরোলজী বিভাগটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এখানে যারা কাজ করবে সবার আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে। কিন্তু সে ধরনের কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থাই নেই। সেই সাথে অভিজ্ঞ জনবলের প্রয়োজন রয়েছে। নেই কোন চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান। ভাইরোলজী বিভাগটি রয়েছে শুধু নামেই।

তিনি বলেন, ‘মাইক্রোবায়োলজী বিভাগে আমিসহ দু’জন শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন। ছয়জন টেকনিশিয়ানের বিপরিতে দু’জন মাত্র টেকনিশিয়ান রয়েছে। তাদের দিয়েও ভরসা করা যায় না। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য তিন মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করে যে কোম্পানি মেশিনটি সরবরাহ করেছে তাদের মাধ্যমে সাত দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের এ প্রশিক্ষণ কতটুকু কাজে আসবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সামান্য ভুলেই বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অসীত ভূষণ দাস বলেন, ‘ভাইরাস পরীক্ষাগারে নিরাপত্তার বিষয়টি জরুরী। তাই গণপূর্ত বিভাগ সেই বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আমারাও চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব করোনা ভাইরাস পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে। এজন্য শুক্রবার ছুটির দিনেও গণপূর্ত বিভাগ অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে কাজ করেছে। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যেই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশাবাদী তিনি।

মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের প্রধানের স্বেচ্ছায় অবসরে যাবার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন দাবি করে অধ্যক্ষ বলেন, অবসরে যাবার বিষয়টিতে আমাদের করোনীয় কিছু নেই। আর ডা. এম.টি জাহাঙ্গীর হুসাইন এলপিআরের আবেদন করেছেন কিনা তাও আমার জানা নেই। তবে ভাইরোলজী বিভাগে চিকিৎসক এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official

অটোরিকশায় ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভিডিও ভাইরাল

banglarmukh official