চলছে করোনার মহা তান্ডব। বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর এই ভাইরাসের থাবায় সন্ত্রস্ত সবাই। এর থেকে বাচতে এখন পর্যন্ত দুটি কর্মপন্থ উদ্ভাবন করেছেন গবেষকরা। প্রথমত হাত-মুখ জীবানুমুক্ত রাখা। দ্বিতীয়ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। ৮ মার্চের পূর্বে বাংলাদেশও নিরাপদ ছিল। কিন্তু কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে দেশের অবস্থাও এখন ভয়াবহ। তার উপরে দেশের মানুষ সামাজিক দূরত্ব মানতে নারাজ। পুলিশ-প্রশাসন সর্বাত্ম চেষ্টা করে ঘরে রাখতে বাধ্য করছেন। তারপরও ফুসরত পেলে ছুটে যান বাইরে নানান ইস্যুতে। এতে করে করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি থেকে যায় জনপদে।
তেমনি বড় ধরণের ঝুঁকি থেকে বরিশাল নগরীকে বাচিয়ে দিলেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান। এই কর্মকর্তার বিচক্ষণতায় এই যাত্রায় রক্ষা পেলো কমিউনিট ট্রান্সমিশন। আর তাই লোকমুখে প্রশংসায় ভাসছেন শাহাবুদ্দিন খান। ছোট্ট একটি সিদ্ধান্তে এটা সম্ভব হয়েছে। বিএমপি হেডকোয়াটার্স জানিয়েছে, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান সার্বক্ষণিক নগরীর সব জায়গার খোঁজ রাখেন। প্রত্যেক থানার, প্রত্যেক মহল্লার খবর তা্কে পৌঁছাতে হয় ঘন্টায় ঘন্টায়। এতে করে অবশ্য অনেক থানার কর্মকর্তারা রয়েছেন চাপের মুখে। কিন্তু করেনা প্রতিরোধ যুদ্ধে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করায় এসবই মেনে নিতে হচ্ছে অফিসারদের।
জানা গেছে, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান সরাসরি মনিটরিং করায় প্রত্যেক এলাকায় পৌঁছে গেছে সরকারি সেবা ও পুলিশি টহল। দিনে কয়েক দফায় টহল টিম ঘুরে ঘুরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেন।
তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর দুটি এলাকায় কার্ফু জারি করেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান। সূত্র মতে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সফল মেয়র, জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও এমপি মরহুম শওকত হোসেন হিরনের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলে স্বজনরা দাফনের সিদ্ধান্ত নেন বরিশালে। সে অনুসারে নূরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজার নামাজ এবং মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হয়।
যেহেতু একজন সফল রাজনীতিবিদের ভাই এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন হারুন অর রশিদ। সেকারনে তার জানাজায় বিপুল পিরমানে জনসমাগমের সম্ভাবনা ছিল। তাছাড়া বরিশাল নগরীতে জনপ্রিয় এই পরিবারের মানুষের জন্য আলাদা ভালোবাসা রয়েছে নগরবাসীর। ফলে হারুন অর রশিদের জানাজায় ঘরে থাকার নির্দেশনা নাও মানতে পারেন নগরবাসী।
যে কারনে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই এলাকায় কার্ফু জারি করেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান। আর সেই সংবাদ গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলে নিবৃত হন মানুষ। যদিও ধর্মীয় বিধান অনুসারে বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদের দাফন সম্পন্ন হয়। দাফন সম্পন্ন করেন তার স্বজনরা।
কিন্তু বৃহৎ কোন জনসমাগম না হওয়ায় করোনা সংক্রমনের বড় ধরনের ঝুঁকির বাইরে রইলো নগরী।
আমতলার জুমরি খান সড়কের বাসিন্দা খলিলুর রহমান মুঠোফোনে জানান, আমরা ভয়ে ছিলাম মরহুম হারুন অর রশিদ সাহেবের জানাজাকে কেন্দ্র করে জনসামাগম হতে পারে। হলে বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়তাম এলাকাবাসী।
এই বাসিন্দা বলেন, হারুন সাহেব খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার সুনাম নগরীতে ছিল। সঙ্গত কারনে তাকে শেষ বিদায় দিতে অনেক মানুষ আসবেন। এটাই স্বাভাবিক। যদি আগেই মানুষ ঠেকানো না যেত তাহলে করেনার সংক্রমন ছড়াতে পাড়তো।
স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম মনে করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসন যে ভুল করে ঝুঁকিতে ফেলেছে ওই জেলাকে তেমনি একটু অসর্তক হলে বরিশাল নগরীরও এই পরিণতি হতে পারতো। সেক্ষেত্রে কমিশনার বিচক্ষণার পরচিয় দিয়েছেন। নগরবাসী তার কথা সব সময় মনে রাখবেন বলে জানান।
প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরাইল উপজেলার বেড়তলা গ্রামে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় বিপুল সংখ্যায় মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে ব্যর্থতায় সার্কেল এসপি ও সরাইল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে ইতিমধ্যে। একই সাথে সরাইল থানার ৪টি গ্রামের ১৬ হাজার ৫শ’ লোককে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে পুরো দেশে বির্তক ওঠে। আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ে।