এপ্রিল ২৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

যে কারণে তাওবাহ আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল

আল্লাহর দিকে ফিরে আসার নাম তাওবাহ। এ তাওবাহ’র মাধ্যমে মানুষ অন্যায় থেকে নিজেকে বিরত রাখে। তাওবাহ করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হয়। তাওবা করা হলো মহান আল্লাহর নির্দেশ। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় আমল। আল্লাহ তাআলা বলেন-
তোমরা প্রত্যেকেই আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করো।’ (সুরা আত-তাহরিম : আয়াত ৮)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো গোনাহ ছিল না। তারপরও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম কম-বেশি ৭০/১০০ বার তাওবা করতেন। আর তাওবাহ মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাওবা-এর মাধ্যমে অনেক নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন।

তাওবাকারী শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। রব বলে মাফ করার করুণ আকুতি পেশ করেন। আর তাওবাহ ছিল প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় আমল। তাইতো তাওবাকারীকে মহান আল্লাহ বেশি ভালো বাসেন।

তাওবাহ করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি অনেক বেশি খুশি হন। যা অন্য কোনো ইবাদতে হওয়া যায় না। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু দু’টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। একটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আর একটি তিার নিজের পক্ষ থেকে। আর তাহলো-

– তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি তার গোনাহগুলোকে এত বড় (বোঝা) মনে করে যে, সে যেন একটা পর্বতের নিচে বসে আছে। আর সে আশংকা করবে যে সম্ভবত পর্বতটা তার ওপরই ধ্বসে পড়বে। আর যে বক্তি পাপে নিমজ্জিত সে তার গোনাহগুলোকে মাছির মতো (ক্ষুদ্র) মনে করে। যা তার নাকে বসে চলে যায়। আবু শিহাব নিজ নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে দেন।

পক্ষান্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মনে করো কোনো এক ব্যক্তি (সফরের) কোনো এক স্থানে (বিশ্রাম গ্রহণের জন্য) অবতরণ করলো। আর সেখানে প্রাণেরও ভয় ছিল। তার সঙ্গে তার সফরের বাহনও ছিল। যার ওপর ছিল (সফরের) খাদ্য ও পানীয়। (এ সব রেখে) সে ঘুমিয়ে পড়লো। আর জেগে দেখলো তার বাহন হারিয়ে গেছে। সে সময় সে গরমে ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো।

তখন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, ‌আল্লাহ যা চাইলেন তা হলো। তখন সে বললো- আমি যে স্থানে ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। তারপর সে নিজ স্থানে ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়লো।তারপর জেগে দেখলো যে, তার বাহনটি তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। (খাদ্য ও পানীয়সহ) বাহন পেয়ে সে ব্যক্তি যতটা খুশী হলো, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার তাওবাহ করার কারণে এরচেয়েও বেশি খুশি হন।’ (বুখারি)

অন্য বর্ণনা হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবাহ’র কারণে সেই লোকটির চেয়েও বেশি খুশি হন; যে লোকটি মরুভূমিতে তাঁর উট হারিয়ে যাওয়ার পর তা পেয়ে যায়।’ (বুখারি, মুসলিম)

মানুষের উচিত আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হতে বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফারের আমলে নিজেদের জীবন রাঙিয়ে তোলা। কেননা বিশ্বনবি যে কোনো মজলিশে এত বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করতেন যে, গুণতে থাকলে বুঝা যেত যে, তিনি ১০০ বার এ তাওবা করছেন-

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়া তুত্ আলাইয়িা ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুর রাহিম।’
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি অতিশয় তাওবাকবুলকারী এবং দয়াবান।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

সুতরাং আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হতে পাপ করার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি। কেননা এক হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায় করা ও তাওবা করার প্রসঙ্গে ঘোষণা দেন যে-
‌রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন এবং (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি তৈরি করবেন; যারা পাপ করবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালে চিরস্থায়ী জীবনের সফলতা লাভে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ তাওবাহ’র মাধ্যমে সমাধানের তাওফিক দান করুন।

আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official