27 C
Dhaka
এপ্রিল ১৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
করোনা

সংকটের শেষ কোথায়, কী আছে শেষে

দেড় মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে মারা গেছেন দেড় শ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন ৩৩২ জন। বাংলাদেশে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে এই সময় মারা গেছেন কয়েক শ এবং ‘করোনার উপসর্গ’ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও সমপরিমাণ। সব যোগ দিলে সংখ্যা দাঁড়ায় হাজারের বেশি।

 

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশ-বিদেশের খেলাধুলা, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যজগতের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিরা তাঁদের অভিমত প্রকাশ করছেন। কিন্তু এই দুর্যোগ প্রশমিত হওয়ার পর বৈশ্বিক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন রূপ ধারণ করবে, সে সম্পর্কে শেষ কথা কেউ বলতে পারছেন না।

 

 

পশ্চিমা রাষ্ট্রনায়কদের ভাষায় এই ভাইরাস একটি ‘ভেরি আননৌন এনিমি’—অত্যন্ত অপরিচিত দুশমন। পশ্চিমা শাসকেরা বন্ধুর চেয়ে শত্রু শব্দটি বেশি ব্যবহারে অভ্যস্ত। গত হাজার বছরে যত বড় বড় যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত হয়েছে, তার সবই ইউরোপে এবং নিকট প্রতিবেশীদের সঙ্গে শত্রুতাবশত। এখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে নয়, দূরদেশিদের সঙ্গে। বিধাতার অপার লীলা, এবার ‘অপরিচিত শত্রুর’ সঙ্গে যুদ্ধে ইঙ্গো-মার্কিন-ফরাসি বলয়ই বেশি বিধ্বস্ত।

 

চিকিৎসাব্যবস্থা যত উন্নতই হোক, মানুষ যত বেশি বুদ্ধিমত্তার অধিকারীই হোক, চোখে দেখা যায় না এমন অদৃশ্য কিছু আছে যার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা মানুষের তৈরি আণবিক বোমার চেয়ে বেশি। চীনের উহান থেকে ওয়াশিংটন অথবা ওয়াশিংটন থেকে উহানে কোনো মিসাইল হয়তো যেতে পারত না—করোনাভাইরাস গেছে। তিন মাসের কম সময়ে এই অদৃশ্য শত্রুর আক্রমণে আমেরিকায় মারা গেছেন ৫৫ হাজারের বেশি নাগরিক। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে জড়িয়ে আমেরিকার এত নাগরিক নিহত হননি। ব্রিটেনে মারা গেছেন ২১ হাজার। গত ৫০ বছরে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটেনের এত সৈন্য নিহত হননি।

 

গত ১২০ বছরে চিকিৎসাশাস্ত্রে যত বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তার অল্প কয়েকজন বাদে সবাই আমেরিকান, জার্মান, ব্রিটেন ও ফরাসি। এখনো তাঁদের অনেকে জীবিত। করোনা প্রতিরোধে তাঁরা কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন কি না জানি না, তবে অনাগত বিজ্ঞানীরা রাখবেন বলে আশা করা যায়।

 

জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি, বিপুল অর্থসম্পদ ও শক্তিমদমত্ততাই জগতের শেষ কথা নয়। বিশ্বব্যবস্থা যদি মানবিক না হয়, নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তির ওপর যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে প্রকৃতিই প্রতিশোধ নেয়। প্রাচীন সব ধর্মগ্রন্থেই সে কথা বলা হয়েছে। কুড়ি শতকের সবচেয়ে বড় বস্তুবাদী বিশ্লেষণী দার্শনিক অস্ট্রিয়ার ভিটগেনেস্টাইন মৃত্যুর আগে বলেছেন, ‘দর্শন ও বিজ্ঞান যদি জীবনের প্রধান বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজে বের করে, তার পরেও থেকে যাবে মানবজীবনের দুর্ভেদ্য রহস্য।’

 

বিশ্বব্যাপী করোনার আক্রমণ অনন্তকাল থাকবে না, অথবা কোন দেশে কত দিন থাকে তা বলা যায় না। প্রকৃতির খামখেয়ালির ওপর মানুষের হাত নেই এবং এই দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর ভবিষ্যতে এর চেয়েও মারাত্মক কোনো ভাইরাস যে দুনিয়ায় দেখা দেবে না, তার

নিশ্চয়তা নেই। এবার যেমন ঘরের ভেতরে অবস্থান নিয়ে অনেকেই আত্মরক্ষা করছেন, তখন সে সুযোগ না–ও পাওয়া যেতে পারে।

 

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ইউরোপ ও আমেরিকা তাদের পথে চলবে। আগামী পুঁজিবাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে, সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো কোনো পণ্ডিত এখন পর্যন্ত আত্মপ্রকাশ করেনি। আমাদের উপায় কী হবে, তা নিয়ে ভাবার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় যাঁরা কাঁধে নিয়েছেন, তাঁরা কোয়ারেন্টিনে আছেন। এবং কত দিন থাকেন তার নিশ্চয়তা নেই। তাই সাধারণ মানুষ অন্ধকারে রয়েছে। কারণ, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রশ্ন করার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

 

রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের অভাব—এ অপবাদ বাংলাদেশকে কেউ দিতে পারবে না। আছে ক্ষমতায় ১৪ দল, আছে তার বাইরে ২০ দল, আরও আছে পাতানো বিরোধী দল। অবশ্য পাতানো বিরোধী দল পাতানো খালুর মতো, বিপদের সময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ২০ দলের দলের প্রধান নেতারা উপমা-উৎপ্রেক্ষাবহুল বিবৃতি দেওয়ায় চ্যাম্পিয়ন। সমস্যা মোকাবিলায় এখন এক বিরাট টাকার অঙ্কের উপদেশনামা ঘোষণা করেছেন, যা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ সোনার বাংলা না হয়ে যায় না। কোয়ারেন্টিনে থাকা তঁাদেরও মৌলিক অধিকার এবং তা তঁারা উপভোগ করছেন। ২০০৯ থেকে ছিলেন হাফ কোয়ারেন্টিনে, করোনা তঁাদের ফুল কোয়ারেন্টিনের সুযোগ করে দিয়েছে। ১৪–দলীয় মহাজোটের ১৩ দলের ১৩ নেতার কার কী ভূমিকা, তা নিপুণ গোয়েন্দার খাতাতেও আছে কি না, সন্দেহ।

 

সংসদীয় গণতন্ত্রের অনেক দুর্বলতা সত্ত্বেও তার বড় গুণ তাতে যৌথ নেতৃত্বে সরকার পরিচালিত হয়। আমাদের সংবিধানে সে কথা বলা আছে, তবে এখন তা কাজির গোয়ালের গরুর মতো। সংসদীয় গণতন্ত্রের যৌথ নেতৃত্বের একটি দৃষ্টান্ত করোনার মধ্যেই দেখা গেল। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দুয়ারে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দুই সপ্তাহ। তিনি যদি পরলোকগমন করেন, তাহলে কীভাবে দেশ চলবে, তাঁর আইসিইউতে ঢোকার আগেই দেশবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়। পৃথিবীতে কোনো মানুষই অপরিহার্য নয়, যেমনটি অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর এক পদ্যে বলেছিলেন, ‘মহাত্মাজি যদি মারা যান/ আকাশ হবে না খান খান/ সূর্য উঠবে।’

 

দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশেই টেকসই শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টেকসই। কমিউনিস্ট পার্টি–শাসিত ভিয়েতনামের শাসনব্যবস্থা স্থায়িত্বশীল। যত মতপার্থক্যই থাকুক, সব দলের নেতারা মিলেই দেশের সমস্যা সমাধান করেন। করোনা–পরিস্থিতির মধ্যেও সেটা দেখা গেল।

 

বাংলাদেশের অবস্থা ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একা বহন করছেন সব ভার। তঁার দয়ায় যাঁরা গত এক যুগ ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগ করছেন এবং গড়ে নিয়েছেন ভাগ্য, সীমাহীন বিত্তবৈভব তাঁরা যে এই সংকটে প্রধানমন্ত্রীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবেন, তা দেখা গেল না। যা হচ্ছে এ অবস্থাও যদি জনগণ দেখত যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দলমত-নির্বিশেষে কাজ করছেন, তাহলে জনগণের মনোবল শক্ত হতো। নিয়তিকে মেনে নিয়েই তারা সরকারকে সহযোগিতা করত।

 

করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্ণধার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁর অত্যন্ত অসুস্থ

সম্পর্কিত পোস্ট

করোনা: বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে

banglarmukh official

বিশ্বে একদিনে করোনা শনাক্ত প্রায় ৫ লাখ, মৃত্যু ১১৫২

banglarmukh official

করোনায় মৃত্যুশূন্য দিনে শনাক্ত ২৯৯, হার ১৩.৬০ শতাংশ

banglarmukh official

করোনায় আরও ৪৫৪ মৃত্যু, শনাক্ত আড়াই লাখের নিচে

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় একদিনে ১১৮৯ মৃত্যু, শনাক্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় আরও ১১৭০ মৃত্যু, শনাক্ত সোয়া চার লাখ

banglarmukh official