প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে একেরপর এক উদ্যোগ গ্রহন করছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। সবশেষ তারা করোনার বিস্তার রোধে জানাজা নামাজ ও দাফন কাজে লোকসমাগম ঠেকাতে কারফিউ জারি করেছেন মুসলিম গোরস্থানসহ তৎসংলগ্ন এলাকায়।
অবশ্য করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতির কমতি ছিল না বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের। করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের এই ইউনিটের ভূমিকা সারাদেশে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন এখানকার স্থানীয়রা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান-বিপিএম (বার) এর নির্দেশনায় শুরু থেকেই করোনায় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রচার প্রচারণা, জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করে নগরী ধুয়ে ফেলা, মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করা, মধ্যবিত্ত পরিবারে লুকিয়ে রাতের আধারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া এমনকি করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া মানুষের জানাযা ও দাফন কাফনে তাদের কার্যক্রম বেশ প্রশংসিত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাইরের লোক প্রবেশ ও বাহির ঠেকাতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট। প্রথমদিকে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট দশটি চেকপোস্ট থাকলেও সেই সংখ্যা বেড়ে এখন ১১টি। এসব পয়েন্টে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে কাজ করছে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা।
এদিকে শুধুমাত্র পুলিশের চেকপোস্ট নয়, এর পাশাপাশি বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। এরই মধ্যে বরিশাল মহানগরীর তিনটি এন্ট্রিপয়েন্টে বসানো হয়েছে এ সিসি ক্যামেরা। এর একটি বরিশাল-পটুয়াখালী ও ভোলা মহাসড়কের মধ্যবর্তী বন্দর থানাধীন জিরো পয়েন্টে বসানো হয়েছে।
অপর দুটির একটি বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কালিজিরা ব্রিজ এবং অপরটি বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনহাট নামক স্থানে। আর নতুন চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বরিশাল-বাবুগঞ্জের বাইপাস সড়কের বটতলা নামক স্থানে।
তবে এর আগে থেকেই এয়ারপোর্ট থানাধীন করাপুর স্টিল ব্রিজ, রহমত পুর মোড়, লাকুটিয়া সড়ক, নথুল্লাবাদ, গড়িয়ার পাড়, বন্দর থানাধীন লাহারহাট, তালুকদার হাট, খয়রাবাদ ব্রিজ, কোতয়ালী মডেল থানাধীন কালিজিরা ব্রীজ ও রূপাতলীতে চেক পোস্ট স্থাপন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার ও স্টাফ অফিসার মো. আব্দুল হালিম বলেন, কমিশনার স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী শুরু থেকেই আমরা শক্তসমর্থ হবে কাজ করছি। যাতে বরিশাল মহানগরী করমুক্ত রাখা যায়।
তিনি বলেন, চেকপোস্ট গুলোতে কারা আসছে, কারা যাচ্ছে এবং পুলিশ সদস্যরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা সে বিষয়টি তদারকির জন্যই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যা কমিশনার স্যার নিজেই কার্যালয়ে বসে মনিটরিং করছেন।
তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে বরিশাল নগরীতে প্রবেশ এর সকল পথেই চেকপোস্ট রয়েছে। শুধুমাত্র বরিশাল-বাবুগঞ্জের অভ্যন্তরিন বাইপাস সড়কে কোন চেকপোস্ট ছিলনা। কিন্তু বাবুগঞ্জ উপজেলা করোনা ভাইরাসের জন্য ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
তার মধে ওই পথ দিয়ে বাবুগঞ্জ এলাকার মানুষ বরিশাল নগরীতে আসা-যাওয়া করছিল। তাই বাবুগঞ্জ ও বরিশালের (লাকুটিয়া হয়ে) ওই সড়কটির বটতলা নামক স্থানে বসানো হয়েছে আরেকটি চেকপোস্ট।
সরকারের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার এটাই একমাত্র পথ বা উপায়। তাই কষ্ট করে হলেও কিছু দিনের জন্য নিজের এবং পরিবারের কথা ভেবে অপ্রয়োজনে বাহির না হয়ে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।