32 C
Dhaka
এপ্রিল ২৩, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কী শুরু হবে?

বারাক ওবামা যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সেই সময় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ গ্যাস হামলা চালান। এতে এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৩ সালের আগস্টের ঘটনা এটি। ওই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘সিরিয়ায় যখন আমরা হামলা চালাতে যাচ্ছি; তখন তা কেন সম্প্রচার করা হচ্ছে? কেন আমরা একটু শান্ত থাকতে পারি না? আমরা যদি হামলা চালাই, তাহলে সেটাকে বিস্ময়কর হিসেবে ধরা যায় না?

এখন সিরিয়া শাসক ও তার মিত্ররা যখন একই ধরনের রাসায়নিক হামলা চালাল ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন আবারো টুইট করলেন। টুইটে তিনি বলেন, ‘সিরিয়ায় ছোড়া যে কোনো এবং সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। প্রস্তুত হও রাশিয়া, কারণ সুন্দর, নতুন এবং স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্র আসছে। গ্যাস প্রয়োগে হত্যাকারী জানোয়ারের সঙ্গী হওয়া উচিত নয় রাশিয়ার; যে তার দেশের মানুষকে হত্যা করে উল্লাস করছে।’

অতীতের রেকর্ড বলছে, ট্রাম্পের মতে ওবামা আমলের পররাষ্ট্র নীতি গোপন রাখা উচিত ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বর্তমান কর্মকাণ্ড বলছে, পররাষ্ট্র নীতির গঠন এবং প্রচার উভয়ই টুইটারে হওয়া উচিত। এটি তিনি করেছেন, টুইটারে ঘোষণা দিয়ে যে, রাশিয়া, আসাদ এবং ইরানের জন্য অস্পষ্ট ‘কিছু’ আসছে।

পশ্চিমা বিশ্বের কিছু বিশ্লেষক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেয়ার আবারো একটা সুযোগ পেলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর এটা অপ্রত্যাশিত নয়। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম রীতিমতো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুডে রুশ নাগরিকদের দিক নির্দেশনা দেয়া শুরু করলো যে, বাঙ্কারে আত্মগোপনে যাওয়ার আগে কি ধরনের খাদ্য-সামগ্রী তাদের কিনতে হবে।

হামলার খবরে সম্ভবত উভয়-পক্ষের লোকজন ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়লেন। তবে ট্রাম্পের আদেশ এবং থেরেসা মে ও এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর যোগদানের ফলে সিরিয়া অথবা অন্য যে কোনো স্থানে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল না। এমনকি প্রকাশ্যে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে মুখোমুখি হতেও দেখা গেল না।

এবারের এই হামলা ছিল ২০১৭ সালে সিরিয়ার শ্যায়রাত বিমান ঘাঁটিতে হামলার মতোই; অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সিরিয়ায় রুশ স্বার্থ এড়িয়ে শনিবার হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলা সিরিয়ার শাসনব্যবস্থার শীর্ষে থাকা আসাদকে উৎখাত করতে পারবে না। এছাড়া এর ফলে সিরিয়ায় মার্কিন অগ্রাধিকারে কোনো পরিবর্তন আসবে না; যা ওবামা আমলের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নীতির মতোই এখনও অব্যাহত রয়েছে।

আসাদ শুধুমাত্র তখনই খারাপ; যখন তিনি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেন

সিরিয়ায় নাগরিকরা রাশিয়া এবং ইরানের শাসকগোষ্ঠীর হাতে যে অন্যান্যভাবেও হত্যার শিকার হচ্ছেন সেবিষয়ে আলোচনা না করে বেসামরিকদের ওপর রাসায়নিক হামলার অভিযোগ অত্যন্ত হাস্যকর।

একদিকে আসাদের সঙ্গে মিত্রতা করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কেউ রাশিয়ার সমালোচনা করবেন এটা যেমন আরো বেশি হাস্যকর; অন্যদিকে দুর্নীতি ও মিথ্যাচারের প্রাথমিক তদন্তের কারণে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে সেটাও বেশ হাস্যকর।

তবে এটা পরিষ্কার, রাসায়নিক অস্ত্রের ধোঁয়া তুলে সিরিয়াকে কোণঠাসা করে রাখতে ওবামা প্রশাসনই প্রাথমিকভাবে দায়ী; এমনকি সিরিয়াকে রাশিয়া এবং ইরানের হাতে তুলে দেয়ার জন্যও। যখন আসাদকে (সিরীয় আন্দোলনের মূল দাবি) অপসারণের কথা বলা হয়, তখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয়ার পরিবর্তে ইরাকের জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুদ্ধকে বেশি অগ্রাধিকার দেন ওবামা।

ওবামার নির্দেশে কুর্দি যোদ্ধাদের সমন্বয়ে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স গঠন করা হয়; যাদের সঙ্গে গেরিলা যোদ্ধা ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর সম্পর্ক রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের শপথ নেয়ার পর ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সিরিয়ায় কয়েকশ মার্কিন মেরিন সেনা মোতায়েন করা হয়। এছাড়া ওয়াইপিজি গোষ্ঠী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন পেয়ে আসছে তখন থেকেই।

২০১৪ সালে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিমান হামলা শুরু হয় এবং ১৫ হাজারের বেশিবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে শিশুসহ হাজার হাজার সিরীয় নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে। পাশাপাশি আল-রাক্কা এবং দেইর আল-জোরের মতো শহর ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তবে মোটাদাগে বলা যায়, ট্রাম্পের সিরিয়া নীতি ঠিক ওবামার নীতির মতোই বলবৎ অাছে; কোনো পরিবর্তন হয়নি। এছাড়া এ ধরনের হামলার ফলে এখনই পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই কম।

সিরীয় জনগণের বন্ধু নয় ট্রাম্প

টুইটারে ট্রাম্পের দেয়া বড় বড় প্রতিশ্রুতিগুলোর সবচেয়ে বড় ফল শূন্যের খাতায়। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার মিত্রদের নৃশংসতার পর ট্রাম্পের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি সিরিয়ার মানুষকে কোনো আশা দেখাতে পারেনি। শাসকগোষ্ঠীর স্থাপনা লক্ষ্য করে পশ্চিমা জোটের হামলাকে সিরীয় জনগণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বাগত জানায়।

কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তারা হতাশ হয়ে পড়েন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিসের বক্তব্যে। ম্যাটিস বলেন, ‘এই মুহূর্তে, এটি একটি ঝটিকা অভিযান এবং আমি বিশ্বাস করি যে এর মাধ্যমে আবারো (রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার থেকে) থামাতে অবাধ্য আসাদকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়া গেছে।’

কিন্তু একজন রিফ্রেশার হিসেবে যিনি নিজের দেশে সিরীয় নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন আর যাই হোক তাদের ব্যাপারে যে তিনি যত্নশীল হবেন না এটাই স্বাভাবিক। তারা মরছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে। এটা আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে সিরীয় এবং অন্যান্যদের আসার পথ আরো কঠিন করে তোলার লড়াই করছে ট্রাম্প প্রশাসন।

২০১৩ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসলামোফোবিয়া নিয়ে করা টুইটগুলো স্মরণ করাই বিচক্ষণতার কাজ হবে। ওই সময় সিরিয়ায় মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরোধীতায় টুইট করেন তৎকালীন মার্কিন এ ধনকুবের। সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে দেশটির মানুষ আন্দোলন শুরু করলে ট্রাম্প টুইটে বলেন, ‘মনে করুন, সিরিয়ার এই মুক্তিযোদ্ধারা বিমানে করে আমাদের ভবনে উড়ে আসতে চায়। তিনি আরো দাবি করেন, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অনেকেই ইসলামি মৌলবাদী; যারা খ্রিষ্টানদের খুন করছে। কেন আমরা তাদের সঙ্গে লড়াই করবো?

রুশ-মার্কিন সমন্বয়, মোকাবেলা নয়

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হামলার পর এখন কি ঘটতে যাচ্ছে অধিকাংশ বিশ্লেষকের মনযোগ এখন সেদিকেই। গত সপ্তাহে সিরিয়ার হোমস নগরীর বিমানঘাঁটিতে বেশ কয়েকবার হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অন্তত তিন সদস্য নিহত হয়। শুক্রবার সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর ঘোষণা দেয় সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত বাহিনী। তাদের এই ঘোষণার জবাব দেয়ার মোক্ষম সময় হিসেবে শনিবার একযোগে হামলা চালানোর পথ বেছে নেয় ইঙ্গ-মার্কিন-ফরাসী জোট।

ইরানের ওই ঘোষণা এবং ইসরায়েলি হামলার সময় নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখে রাশিয়া। বাগাড়ম্বরপূর্ণ বাক-বিতণ্ডা থেকে বিরত থাকে দেশটি। তবে এটা টুকে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন হামলা চালানোর সময় সিরিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি; যা বর্তমানে রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে।

সর্বশেষ এই মার্কিন জোটের অভিযান ও আগের বিমান হামলার পর রাশিয়ার সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন বলে অনেকেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। সিরিয়ায় রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। ২০১৫ সালে দেশটিতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পর থেকে ওয়াশিংটন এবং মস্কো সামরিকভাবে সমন্বয় করে আসছে। এবং ভবিষ্যতে সিরিয়ায় যাই ঘটুক না কেন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া নিশ্চিতভাবে একটি নিষ্পত্তিতে পৌঁছাবে।

এদিকে, একজন আছেন যিনি বিশ্বাস করেন উভয় পক্ষের জন্যই সিরিয়া পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দেশের ভেতরে ট্রাম্প বর্তমানে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন। নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তের জেরে সম্প্রতি ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে এফবিআই। গত সপ্তাহের এ ঘটনা নিয়ে মোটামুটি অস্বস্তিতেই রয়েছেন তিনি। এফবিআইয়ের তদন্তের এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সিরিয়া শাসক আসাদের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে যাচ্ছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে সংবাদ প্রচার করা হয়।

অন্যদিকে, অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে ক্রেমলিন; পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রুশ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ আকার ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে বিশ্ব সুপার পাওয়ারের তকমা ছিনিয়ে নিতে মরিয়া রাশিয়া দেশের ভেতরে ও বাইরের সমস্যা থেকে জনগণকে দূরে রাখার উপযুক্ত সময় বগলদাবা করতে সক্ষম হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official

দিল্লির ঘরে ঘরে জ্বর!

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official