প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্ব এখন মূলত লকডাউন; আরো স্পষ্ট করে বললে বাধ্যতামূলকভাবে ঘরবন্দী। টানা প্রায় চারমাস ধরে এই ভাইরাস সারাবিশ্বকে তটস্থ রাখলেও এখনো এর প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি কোনো দেশই। আর এই পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশে প্রতিদিনই আরো জটিল হচ্ছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে সর্বমোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন হাজার ৭৭২ জন। এদিকে দেশে সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন পরিসংখ্যান তালিকা আকারে প্রকাশ করেছে আইইডিসিআর।
সেখানে দেখা যাচ্ছে- সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নারীর তুলনায় পুরুষ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আর এ রোগে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুবক বা যুবতীরা অর্থাৎ ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যাই বেশি। আইইডিসিআরের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশই পুরুষ। আর আক্রান্ত নারী রোগী মাত্র ৩২ শতাংশ।
এদিকে বয়সের ভিত্তিতে করা তালিকায় দেখা যায়- দেশে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাই সর্বোচ্চ সংখ্যায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দেশে মোট করোনা আক্রান্তের প্রায় ২৪ শতাংশই এই বয়সী মানুষ। এরপর কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যায় রয়েছে মধ্যবয়স্করা। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মধ্যবয়স্ক মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার হার ২২ শতাংশ।
এরপর ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের রোগীর হার ১৫ শতাংশ। তবে বয়স্ক আর শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। ৬০ উর্ধ্ব করোনা আক্রান্ত রোগীর হার ১০ শতাংশ ও ১১ থেকে ২০ বছরের কিশোর-কিশোরীদের আক্রান্তের হার মাত্র আট শতাংশ।
এদিকে পরিসংখ্যান বলছে, করোনাভাইরাস নামে এই প্রাণঘাতী রোগটি শিশুদের উপর এখনো চড়াও হতে পারেনি। ১০ বছরের নিচে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে শিশু আক্রান্তের হার মাত্র তিন শতাংশ। তবে ৬০ উর্ধ্বদের মধ্যে এই রোগে মৃত্যুর হার বেশি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে গত ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তি মারা যায়। ওই ব্যক্তির বয়স ছিল ৭০ বছর। এরপর থেকে ৬০ উর্ধ্ব বয়স্কদের মৃত্যুর বিষয়টি বেশি জানা যায়। এছাড়াও যাদের কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসহ, হৃদ রোগের জটিলতা রয়েছে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার তাদের বেশি রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বর্তমানে দেশে লোকাল ট্রান্সমিশন হওয়ায় বিদেশফেরত ছাড়াও এখন প্রায় সকল স্তরের মানুষের মাঝে করোনায় সংক্রমণ হচ্ছে।