আগামী ২২ এপ্রিল থেকে সরাদেশে একযোগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
ডিপিই থেকে জানা গেছে, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা জেলা পর্যায়েই নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের ৬১ জেলায় এ পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। আগামী ২২ এপ্রিল পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কয়টি ধাপে এ পরীক্ষা হবে, এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চলতি সপ্তাহে পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করে নির্দেশনা জারি হতে পারে। বর্তমানে কেন্দ্র নির্বাচনের কাজ করা হচ্ছে।
ডিপিই সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২২ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। দেশের ৬১ জেলায় এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পার্বত্য তিন জেলায় নীতিমালা অনুযায়ী জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে হবে এ পরীক্ষা আয়োজন। এছাড়া যেসব এলাকায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশি সেখানে দুই ধাপে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে।
এ নিয়ে সম্প্রতি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিপিই মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম ভার্চুয়াল সভা করে এসব সিদ্ধান্তর কথা জানিয়েছেন।
তবে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রাখা হয়েছে স্বয়ং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজন করা হবে, কবে থেকে, কয়টি ধাপে, কতটি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম।
সোমবার (৪ এপ্রিল) নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে অধিদপ্তর থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে মহাপরিচালকের সমন্বয়ে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে আমাদের কিছু নেই।
আগামী ২২ এপ্রিল থেকে শিক্ষক নিয়োগের লিখত পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিদপ্তর- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। অধিদপ্তর থেকে জানালে আমরা জানতে পারবো, নতুবা জানার কোনো সুযোগ নেই।
রোজার মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে নিয়োগ পরীক্ষা ঝুলে থাকায় তা দ্রুত শেষ করতে অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষে যোগ্য প্রার্থীদের যোগদান করানো হবে বলেও জানান তিনি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিপিই’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগামী ২২ এপ্রিল থেকে লিখিত পরীক্ষা শুরু করা হবে। পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণ করা হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্র নির্বাচনের কাজ করা হচ্ছে। আগামী দুই/তিন দিনের মধ্যে অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা জারি করা হবে।
প্রাক-প্রাথমিক ও সহকারী শিক্ষক পদে ৩২ হাজার ৫৭৭টি পদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে অবসরজনিত কারণে এর বাইরে আরও ১০ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়।
এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ঘাটতি দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্যপদ ও বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্যপদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রাথমিকের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর অনলাইনে আবেদন শুরু হয়। এতে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ঢাকা বিভাগে ২ লাখ ৪০ হাজার ৬১৯টি। এছাড়া রাজশাহীতে ২ লাখ ১০ হাজার ৪৩০টি, চট্টগ্রামে ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৩৬টি, রংপুর বিভাগে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৬৬টি, খুলনায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৩টি, ময়মনসিংহে ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৬টি, বরিশালে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৪৪টি এবং সিলেট বিভাগে ৬২ হাজার ৬০৭টি আবেদন জমা পড়েছে।