বরিশালে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগ থেকেই কঠোর অবস্থানে মাঠে নামে জেলা প্রশাসন। করোনা শনাক্তের পর সম্পূর্ণ বরিশাল জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করা হয়। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই অদ্যবধি জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও চিকিৎসকদের তোড়জোড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। বরিশালবাসীকে নিরাপদে রাখতে তাদের একীভূত কার্যক্রম দৃশ্যমান ও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
নাগরিক সমাজে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে প্রশাসনিক কর্তব্যের বাইরে গিয়ে একাধিক কর্তাব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সরব ভুমিকা রাখতে দেখা গেছে। তবে এসব কার্যক্রমে নগরবাসীর মধ্যে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও, গ্রাম গঞ্জের মানুষদের মাঝে প্রকাশ পেয়েছে উদাসীনতা। এমনকি লকডাউন শুরুর আগে এবং এরমধ্যেও বিভিন্ন জেলার মানুষদের বরিশালে প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল সদর উপজেলার লামচরি এলাকার বাসিন্দা রাসেল হোসেন জানান, তাদের এলাকার মানুষজন করোনা প্রতিরোধে এখনও যথেষ্ট সচেতন নন। সামাজিক দূরত্ব না মেনে অনেকেই খোলা মাঠে নিয়মিত খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করছেন। প্রশাসনের সচেতনতার বার্তাগুলো আমলে নিচ্ছেনা এক শ্রেণীর বয়োজ্যেষ্ঠরাও। বরিশাল বন্দর থানাধীন কর্ণকাঠি এলাকার এহসানুল হক বলেন, লকডাউন শুরু হবার পূর্বে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে কিছু মানুষ এলাকায় এসেছে। তাদের ব্যাপারেও প্রবাসীদের মতো কোয়ারান্টাইনে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।
করোনা পরিস্থিতি শুরুর সময় থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণকে সচেতনতার বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়ার রহমান। তিনি বলেন, পৃথিবীর কেউই এখনো জানেন না বর্তমান সংকট থেকে উত্তরনে কার্যকর করণীয় কি হতে পারে। সংক্রমণ রুখতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তিনি আরও জানান, লকডাউন উপেক্ষা করে নদীপথে কিছু মানুষ ঢুকছে। সেটা প্রতিহত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতা সবচেয়ে মুখ্য ব্যাপার। আইন বা পুলিশের ভয় দেখিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
তবে করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে সামাজিক দূরত্ব ভঙ্গ হয় এমন কোনো কাজ বরদাস্ত করা হবেনা বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান। তিনি জানান, নগরজুড়ে বিভিন্ন চেকপোস্ট ও টহল জোরদার করা হয়েছে। লকডাউন কার্যকর করতে সব ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের পূর্বে কিছু মানুষ বাইরে থেকে বরিশালে প্রবেশ করেছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। তাদেরকে কোয়ারান্টাইনে রাখার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগের একমাত্র করোনা পরীক্ষাগার ও চিকিৎসা কেন্দ্র নগরীর শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম)। সৃষ্টিকর্তার পর সেখানকার চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতরাই বরিশালবাসীর নিরাপত্তা ও সুস্থতার প্রধান কারিগর। ইতোমধ্যে রোগীদের পাশে থাকতে গিয়ে সেখানকার একজন চিকিৎসক, একজন সেবিকা ও একজন ছাত্র করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
শেবাচিমের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন পেশাগত দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মানুষদের বারবার সতর্ক বার্তা প্রদান করছেন। পরিচালক বলেন, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমারা সবসময় মানুষদের পাশে থাকবো। কিন্তু সকলের প্রতি অনুরোধ দয়া করে সবাই ঘরে থাকুন। এই যুদ্ধে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে যদি ব্যক্তিগতভাবে নিরাপদ থাকা যায়।