কিছুদিন আগেই তো এই কলার ডজন বিক্রি করেছেন ৪০ টাকা, এখন ৯০ টাকা ডজন চাচ্ছেন কেন?’ একজন নারী ক্রেতার এমন প্রশ্নে বিক্রেতার চটজলদি জবাব- ‘কিছুদিন আগের কথা ভুলে যান। আগের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয়।’
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় শোনা যায় ক্রেতা-বিক্রেতার এমন কথোপকথন। ব্যবসায়ী মো. হুমায়ুন ভ্যানে কলা বিক্রি করছিলেন। তার কাছ থেকে কলা কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী তহুরা বেগম।
দাম শুনে বিরক্ত হলেও বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে কলা কেনেন তহুরা বেগম। শুধু তহুরা নন, রাজধানীর সব এলাকায়ই দ্বিগুণের বেশি দামে পাকা কলা কিনতে হচ্ছে।
রোজাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বাজারগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে পাকা কলার। রোজা শুরুর আগে যে কলার ডজন (১২ পিস) ছিল ৪০ টাকা, তা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৯০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি চাপা কলা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭টা।
তবে সবরি কলার দাম আরও বেশি। প্রতি ডজন সবরি কলা এলাকা ও সাইজভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি সবরি কলার দাম পড়ছে ১০ টাকা।
শুধু কলা নয়, রোজাকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে শসা ও বেগুন। রোজা শুরুর পর এ দুটি পণ্যের দামও দ্বিগুণ বেড়েছে।
রোজায় পাকা কলা, শসা ও বেগুনের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় এ পণ্যগুলোর দাম এমন অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতারা বলছেন, একশ্রেণির ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিতে পণ্যগুলোর অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক ডজন চাপা কলা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৪০-৪৫ টাকা। চাপা কলার মতো দাম বেড়েছে সবরি কলার। কিছুদিন আগে ৭০ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া সবরি কলা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা।
কলার এমন দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. হুমায়ুন বলেন, আড়ত থেকে এখন দ্বিগুণ দামে কলা কিনতে হচ্ছে। আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। দাম বাড়লেও কলার বিক্রি বেড়েছে। আগে যে পরিমাণে কলা বিক্রি হতো, এখন তার থেকে অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। রোজার কারণে কলার এই চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণেই দাম বাড়ছে।
ক্রেতা তহুরা বেগম বলেন, ‘বাসার জন্য নিয়মিত কলা কিনি। রোজার আগে এক ডজন চাপা কলা ৪০ টাকায় কিনেছি। সেই কলা এখন ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। শুধু কলা নয়, বেগুন ও শসার দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে। রোজাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ এর নজরদারি করছে বলে মনে হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে থেকেই সব কিছুর দাম বাড়তি। রোজার ভেতর কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট অনেক বেড়েছে। যাদের টাকা আছে, তাদের হয়তো কষ্ট হচ্ছে না। তবে সাধারণ মানুষ যে কী কষ্টে আছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।’
কলার দোকান থেকে কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বেগুনের কেজি বিক্রি করছেন ৮০-১০০ টাকা, যা রোজার আগে ছিল ৪০ টাকার মধ্যে। রোজার আগে ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম বেড়ে ৬০-৮০ টাকা হয়েছে।’
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন বলেন, রোজার কারণে বেগুন ও শসার চাহিদা অনেক বেড়েছে। বাজারে এ দুটি পণ্যের চাহিদা যে হারে বেড়েছে, সরবরাহ সেভাবে বাড়েনি। পাইকারিতে অনেক বেশি দামে এখন আমাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে। বেশি দামে কেনায় আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি। পাইকারিতে দাম কমলে আমরাও দাম কমিয়ে দেবো।
কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা হায়দার আলী বলেন, ‘রোজাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের পকেট কাটছেন। রোজা শুরু হতেই কী এমন ঘটে গেলো যে কলা, বেগুন, শসার দাম এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গেলো?’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিনে দেশে তো কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, তাহলে এত দাম বাড়বে কেন? আসলে সঠিক নজরদারির অভাবে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা এভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তারা বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে বিভিন্ন পণ্য কিনছেন।’