নিজস্ব প্রতিবেদক :: কখনো মেঘলা আকাশ কিংবা কখনো বৃষ্টি ঝড়ছে, আর এরইমধ্য দিয়ে নিজের ঘরে হাতে তৈরি করা ইফতার সামগ্রী নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভাসমান ও খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষদের মাঝে বিতরণ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা সিকদার।
শনিবার প্রথম রমজান ও রোববার দ্বিতীয় রমজানে বরিশাল নগরের সদররোডসহ বিভিন্ন রাস্তায় তাকে পায়ে হেটে এসব ইফতার সামগ্রী বিতরণ করতে দেখেছেন নগরবাসী। ভিন্নতর এ কাজে এরইমধ্যে সাধারণের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন এই ছাত্রী নেত্রী।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে বরিশাল নগরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো, কিন্তু সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনি ভাসমান ও শ্রমজীবী মানুষের হাতে ইফতার সামগ্রী তুলে দেয়া অব্যাহত রাখেন। ইফতার সামগ্রী বিতরণের সেই ছবি নিজের ফেসবুকে আপলোড দিয়ে তিনি লিখেছেন, বাহিরে প্রচণ্ড বৃষ্টি থাকা সত্বেও তৈরি খাবার নষ্ট হবে পাশাপাশি ওই কর্মহীন মানুষদের কথা ভেবে রমজানের দ্বিতীয় দিনে ইফতার নিয়ে ভাসমান, খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দ্বারে দ্বারে। যে পোষ্টের নিচে ৬ ঘন্টার মধ্যেই ২৫ হাজার লাইক ও লাভ রিয়্যাক্ট, ৫ হাজার ২ শত কমেন্ট, ১ হাজার ৭ শত শেয়ার হয়েছে।
এরআগে শনিবার ইফতার বিতরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে তিনি লিখেছেন, সেদিন টিভিতে অ্যাড দেখছিলাম সবাইকে নিয়ে ভাল থাকার মাঝে রমজানের প্রকৃত মহিমা। এবারের রমজানটা সবার কাছেই অপরিচিত। যারা ঘরে বসে পরিবারের সাথে ইফতার করছে তাদের কাছে কষ্টের না হলেও ভাসমান, শ্রমজীবী শ্রেনীর কাছে এই পবিত্র রমজান ততটাই ভয়ংকর এবং অসহায়ত্বের। তাদের কথা চিন্তা করে প্রথম রমজানে ইফতার তৈরী করে নিয়ে এসেছি রমজানের আনন্দ ভাগ করতে।
এ পোষ্টেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বী একটি মেয়ের এমন মানবিক উদ্যোগ যেন সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সাধুবাদ জানাচ্ছেন তাকে। তিলোত্তমা জানান, শনিবার থেকে রমজান শুরু হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমান একটা বছর অপেক্ষা করে রমজানের জন্য। কিন্তু করোনার মধ্যে এবারের রমজান আগের থেকে ভিন্ন। করোনার সংকটের কারণে অনেকের বাসায় ইফতারের ব্যবস্থা নেই। অনেকের ঘরে খাবার নেই। তাই প্রথম রমজান থেকে বাসায় ইফতার তৈরি করে রাস্তায় বের হয়েছি। সামাজিক দূরত্ব মেনে শতাধিক মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছি শনিবার।
আজও প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল। নিজের তৈরি খাবার নষ্ট হবে ভেবে এবং ভাসমান, গরীব-অসহায় মানুষগুলোর কথা ভেবে বৃষ্টির মধ্যেই ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছি।
তিনি বলেন, এই ইফতার বিতরণ আমার কাছে জীবনের অন্যতম আনন্দের এক মুহূর্ত মনে হয়েছে। কারণ এসব মানুষ ইফতার পেয়ে যে খুশি হয়েছেন তা দেখে আমার মন ভরে গেছে। আমি চেষ্টা করছি, আমার আয়োজনটা আরেকটু বড় করার।
এদিকে খোজ নিয়ে জানাগেছে, শুধু ইফতার বিতরণ নয়, লকডাউনের কারণে বিপদে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিলোত্তমা সিকদার। ঢাবির ছাত্রদের মধ্যে যারা লকডাউনের কারণে টিউশনি বা বিকল্প আয়ের পথ হারিয়ে বিপদে পড়েছেন তাদের নাম সংগ্রহ করে সহযোগিতা করছেন তিলোত্তমা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি। নিজ হল এবং আশপাশে যারা বিভিন্ন বাসায় আটকা পড়েছেন; তাদের জন্য ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, দুই লিটার তেল ও আটা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা সিকদার।