খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের মৃত্যুর পর বাগবিতণ্ডার জেরে দুই ছেলেকে পুলিশে দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে হাসপাতালে মরদেহ আটকে রাখার অভিযোগও উঠেছে। এ ঘটনার পর থেকেই চিকিৎসকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, মহানগরীর দৌলতপুরের পাবলা কারিকর পাড়ার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের (৬৭) স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা (৫৫) শনিবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মায়ের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল হাসানের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন মৃতের ছেলে মোস্তাকিম। এ ঘটনায় তার অপর দুই ভাইকে পুলিশে সোপর্দ করেন চিকিৎসকরা।
মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার স্ত্রীর বুকে ব্যথা ও পায়খানা-প্রস্রাব না হওয়ায় শুক্রবার রাতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১১-১২নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেই রাতে চিকিৎসা করা হয়েছে।
শনিবার রাতে আমার স্ত্রীর অবস্থা গুরুতর হলে আমার ছেলে ডাক্তার ডাকতে যায় কিন্তু কোনো ডাক্তার আসেনি। উল্টো রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলে। রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিতে না পারায় কাগজপত্র দেখানো হয়। তবুও কোনো ডাক্তার রোগীর কাছে যায়নি। এরপর রাতে ছটফট করতে করতে আমার স্ত্রী মারা যান।
মায়ের এমন মৃত্যুতে আমার ছেলে মো. মোস্তাকিম গিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান তারা কেন দেখতে আসলেন না। এ নিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয় চিকিৎসকের। আমি যখন জানতে পারি, গিয়ে হাত-পা ধরে মাফ চাই। তারপরও অপর দুই ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কবির ও সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশে দিয়ে দেয়। তারা বর্তমানে সোনাডাঙ্গা থানায় আটক রয়েছে। আমার স্ত্রীর মরদেহও হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর শামছুদ্দিন আহমাদ প্রিন্স ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গেলেও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল হাসানের সঙ্গে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, মানুষ মারা গেলে একটা পদ্ধতিগতভাবে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ আটকানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
রাতের পর যেন পরিস্থিতি আর খরাপ না হয়, সেজন্য পুলিশকে অবহিত করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। আমরা কোনো জিডি বা মামলা করিনি তাদের বিরুদ্ধে।
নগরীর সোনাডাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. নাহিদ হাসান মৃধা জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসকদের ফোন পেয়ে তরিকুল ও সাদ্দামকে থানায় আনা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ দেয়নি কেউ। যদি কেউ অভিযোগ না করে তাহলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।