ব্যাংকঋণের সুদহার কমাতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। যেসব ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে না, সেসব ব্যাংক আমানত হিসেবে সরকারি তহবিলের অর্থ পাবে না।
এমনকি যারা ইতিমধ্যে ৯ শতাংশে ঋণের সুদহার নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে, সেসব ব্যাংকও এ সুবিধা পাবে না।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এমন কঠোর নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে- নিজস্ব তহবিলের অর্থ, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬ শতাংশের বেশি হারে আমানত রাখা যাবে না।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানা গেছে, সুদের হার কমিয়ে আনতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও নানা সুবিধা নিয়েও ব্যাংকগুলো এতদিন তা কার্যকর করেনি।
কয়েকটি সরকারি ব্যাংক তা মানলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো উল্টো সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা নানা অজুহাতে সুদহার শুধু বাড়ায়নি, গ্রাহকদের ওপর নানা ধরনের চার্জও আরোপ শুরু করে।
লুক্কায়িত নানা চার্জে গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষত সৎ ও প্রকৃত উদ্যোক্তা, ভোক্তা ঋণগ্রহীতারা ঋণের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। অথচ সুদহার কমানোর ঘোষণা ব্যাংক মালিকরাই ঘটা করে দিয়েছিলেন। সে জন্য তারা বেশ কয়েকটি সুবিধাও সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নেন।
সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, সিআরআর এক শতাংশ কমানো, ঋণ আমানতের হার (এডিআর) সমন্বয়সীমার সময় বাড়ানো এবং রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা।
এসব সুবিধা নেয়ার পরও ব্যাংকগুলো সিঙ্গেল ডিজিটে সুদহার আরোপ করেনি; বরং নতুন নতুন অজুহাত দাঁড় করিয়ে সুদহার বাড়িয়েছে, যা কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির পরিপন্থী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রজ্ঞাপনে যা রয়েছে: অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব জেহাদ উদ্দিনের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সরকার থেকে প্রাপ্ত তহবিল, সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট নিজস্ব তহবিলের অর্থ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬ শতাংশের বেশি হারে আমানত রাখা যাবে না। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, যেসব ব্যাংক ২০১৮ সালের ২ আগস্ট প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা এ সুবিধা প্রাপ্য হবে না। নির্দেশনাটি জারির সময় থেকেই কার্যকর হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে শিল্প-বাণিজ্যে গতি আসবে। বর্তমানে জ্বালানি সংকটসহ অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলার পর বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন গ্রাহকরা। গত বছর কয়েকটি ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর ঘোষণা দিলেও কার্যত তা ছিল ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’।
কোনো কোনো ব্যাংক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কম সুদহারের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে গ্রাহকরা ব্যাংকে গেলে তার বিপরীত চিত্র দেখতে পান। সার্ভিস চার্জসহ নানা ফি আরোপ করা হয়। কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সুদের ওপর সুদ বা দণ্ড সুদও প্রয়োগ করা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ অবস্থাকে ব্যাংকগুলোর ‘ডাকাতি কারবার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেছেন, উদ্যোক্তা বিকাশে বাংলাদেশ ব্যাপক সম্ভাবনাময়। কিন্তু উচ্চসুদহার ও জ্বালানি সংকটে এখানে ব্যবসা-শিল্প গড়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। বেসরকারি ব্যাংক মালিকদেরও শিল্প-কারখানা রয়েছে। তথাপি তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েও ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমায়নি।
তিনি বলেন, সরকারের সর্বশেষ এ উদ্যোগ দেশে শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি একই সঙ্গে সুদের ‘সিম্পল রেট’ বাস্তবায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।