সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে বদলি রোজা। আসলে বদলি রোজা বলতে কিছু নেই। যা আছে সেটি ফিদিয়া।কোনো ভুলভ্রান্তির দরুন শরিয়তের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া বিনিময়কে ফিদিয়া বলা হয়। ওই বিনিময় অপারগতার কারণে কোনো শারীরিক ইবাদত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শরিয়তের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়।এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যারা সওম পালনে সক্ষম নয়, তাদের জন্য একজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানোই ফিদিয়া। তিনি আরও বলেন, এ আয়াত রহিত হয়নি। এ বিধান ওই অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্য, যারা সওম পালনে সক্ষম নয়। এরা প্রতিদিনের সওমের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে পেট পুরে আহার করাবে।ফিদিয়া কখন দেওয়া যাবেআল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের ওপর কোনো অসাধ্য কাজ চাপিয়ে দেননি। তাই পবিত্র রমজান মাসেও রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিকল্প বিধান রাখা হয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতার দরুন অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারের বিবেচনায় রোজা রাখতে অক্ষম হন এবং পরে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর রোজার কাজা আদায় করতে হবে। ওই ব্যক্তির জন্য ফিদিয়া নয়। তবে যদি ওই অসুস্থ ব্যক্তি কাজা করার আগেই ইন্তেকাল করেন, তাহলে তার পক্ষ থেকে আত্মীয়-স্বজন ফিদিয়া আদায় করবে। কেননা মারা যাওয়ার দরুন তার আর কাজা করার সুযোগ নেই। (হেদায়া : ২/১২০)আর যদি অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে কিংবা এমন বৃদ্ধ হন যে কখনোই রোজা রাখার মতো সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই, তাহলে ফিদিয়া আদায় করবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৫৫) পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। (কাজা করে নেবে) আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া আদায় করা অর্থাৎ একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)দরিদ্ররা কিভাবে ফিদিয়া আদায় করবেফিদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই। তবে দারিদ্র্যের কারণে যারা ফিদিয়া দিতে একেবারেই অক্ষম, তারা তাওবা করবে। পরে কখনো সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদিয়া আদায় করে দেবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৫৫)ফিদিয়ার পরিমাণরোজার ফিদিয়ার বিষয়ে কুরআনে এসেছে, আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো। (সুরা : বাকারা : ১৮৪)অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি রোজা রাখতে একান্ত অপারগ হলে সে প্রতিদিন একজন দরিদ্রের পেট ভরে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করবে। কেউ চাইলে নগদ টাকাও দিয়ে দিতে পারে। প্রত্যেক রোজার জন্য ফিদিয়ার ন্যূনতম পরিমাণ হলো, সদকায়ে ফিতরের সমান। (আল ইনায়াহ : ২/২৭৩)ফিদিয়া যাকে দেওয়া যাবেফিদিয়ার হকদার গরিব-মিসকিনরা, যারা জাকাতের হকদার। ফিদিয়া কোনো দ্বিনি প্রতিষ্ঠান, যেখানে যাকাতের হকদার আছে, সেখানেও দেওয়া যাবে। (আল ইনায়াহ : ২/২৭৩)