ঈদের পর প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে বহু গুণ। সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির প্রতি কেজি দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি হলেও বাজারে পর্যাপ্ত চিনি নেই।
পাশাপাশি সরবরাহ কমার অজুহাতে সব ধরনের বাড়ানো হয়েছে সবজির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা ও গরুর মাংস ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারেও। পাবদা, টেংরাসহ এ জাতীয় কোনো মাছই সাড়ে পাঁচশো থেকে ছয়শো টাকা কেজি দরে। অন্যান্য মাছের দামও খুব চড়া। এতে বাজারে এসে মাছ না কিনেই বাড়ি ফিরছেন অনেকে। বুধবার সকালে নগরের পোর্টরোডসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বটতলা বাজারে কথা হয় গৃহবধূ রিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চিনির দাম কয়েক মাস ধরে শুধু বাড়ছেই। সরকার মূল্য নির্ধারণ করলেও সেই দামে কখনও বাজারে কিনতে পারিনি।
এই বাজারের মুদি দোকানদার মিলন বলেন, বেশিরভাগ দোকানে যে চিনি বিক্রি হচ্ছে, তা ঈদের আগে কেনা। এছাড়া বর্তমানে চিনির অর্ডার করা হলে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের অন্যান্য পণ্য বাধ্যতামূলক ভাবে কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। ফলে সব দোকানে পর্যাপ্ত চিনি তুলতে পারছে না।’
এদিকে রোজার সময় ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও ঈদের পর কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৪০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পোর্টরোড বাজারের মুরগি বিক্রেতা জনি জানান, সকালে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা, লেয়ার ৩৬০, সোনালী ৩৫০ টাকা দরে। এ ব্যবসায়ী বলেন, রমজান মাসে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা। অন্য মুরগির দামও কেজিতে ১০-২০ টাকা কম ছিল।
রূপাতলী বাজারের মাছ বিক্রেতা জসিম জানান, বাজারে মাছ কমে যাওয়ায় দাম একটু বাড়তির দিকে। এখন ২০০ শত টাকার নিচে কোনো মাছ পাওয়া যায় না। গরীবের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙ্গাশ মাছের দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকায়। শুধু তাই নয়, তেলাপিয়া মাছের দামও বেড়েছে ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে এখন প্রতি কেজি রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম ২৫০-৩০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৮০০ ও বাগদা ৭০০, পোয়া মাছ বড় সাইজের ৬৫০ ও ছোট পোয়া ৫০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০ টাকা, পুঁটি মাছ ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা কামাল জানান, প্রতি কেজি গরুর মাংস এখন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ঈদের আগে ছিল ৭৫০ টাকা। রোজার আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকায়। এছাড়া খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নগরের খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলু ও পেঁয়াজের দাম ৫-১০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। ১০০ টাকায় আড়াই কেজির বেশি আলু বিক্রি করতে চাইছে না কোনো দোকানি। প্রতি কেজি টমেটো টমেটো ৬০-৮০, পেঁয়াজ ৫০-৫৫, বেগুন ৫০, কাঁচা মরিচ ৮০, করলা ৭০, পটল ৪০-৫০, রেখা (চিচিঙ্গা) ৪০, বরবটি ৬০, পেঁপেঁ ৫০, টমেটো ৬০-৮০, গাজর ৮০, শশা ৬০ ও কচুর লতি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫০ ও কলা গাছের শ^াস ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা শামীম বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর কারণে বেশি দামে এনে খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নতুন বাজারে পণ্য কিনতে আসা আল আমিন বলেন, ‘রোজায় এক ধাপে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রেতারা বিক্রি করেছেন। ঈদে বাড়ানো হয় আরেক দফা। আর ঈদের পর ফের কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই নৈরাজ্য দেখার যেন কেউ নেই।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সুমি রানী মিত্র জানান, চিনির দামের বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সাথে বসা হয়েছে। সেখান থেকে জানতে পেরেছি মূলত, ঢাকা থেকেই চিনির দামটা বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে বরিশালের ব্যবসায়িরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক দামে চিনি বিক্রি করছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যর দাম বাড়ানো হয়েছে, সে বিষয়টি আমরা মনিটরিং করছি।