কুরআনের সুমহান শিক্ষায় নিজেকে আলোকিত করতেই মুসলিম উম্মাহর জন্য সেরা উপহার পবিত্র রমজান মাস। এ মাসের রোজা পালনের মাধ্যমেই মানুষ কুরআনের বরকত লাভে নিজেদের তৈরি করবে। যেভাবে হজরত মুসা ও হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম আসমানি গ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জিল ধারণে ৪০ দিন রোজা পালনের মাধ্যমে নিজেদের তৈরি করেছিলেন।
আর সে কারণেই আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য কুরআনের শিক্ষা লাভে রমজান বিধান দিয়ে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী-সংযমী হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
দুনিয়ার সব অন্যায়-অনাচার ও গোনাহ থেকে মুক্তির মাস এটি। যদিও এ মাসকে ৩টি দশকে ভাগ করা হয়েছে। তথাপিও মাসব্যপীই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দান করেন রহমত, বরকত, মাগফেরাত এবং নাজাত দান করবেন। কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই এটিই প্রমাণিত।
এ মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ঘোষণা করে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘মুসলিম উম্মাহর জন্য জান্নাতের সব দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় আর বিতাড়িত শয়তানকে বন্দি করা হয়। যাতে তার কোনো চক্রান্তে মানুষ বিপদগামী না হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘যারা ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে রমজানের রাতের (তারাবিহ) নামাজ পড়বে, আল্লাহ তাআলা সেসব বান্দার আগের জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
পবিত্র রমজান মাসের রোজা পালনের ব্যাপারে এ রকম অসংখ্য ফজিলত ও সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সিয়াম সাধনার মাধ্যমে এ মাসে মুসলিম উম্মাহ লাভ করবে আত্মিক পরিশুদ্ধতা ও প্রশান্তি।
তাইতো প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই সতর্কবার্তার কথাই স্মরণ রাখতে হবে। সফলতা লাভে দৈনন্দিন জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘এ পবিত্র মাসে যারা রোজা রেখে মিথ্যা, পরনিন্দা (গিবত) ত্যাগ ও অন্যান্য পাপাচার থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলো না; তাদের দিনভর উপবাসে আল্লাহ তাআলার কোনো প্রয়োজন নেই।’
আর যারা নীতি-নৈতিকা ও আত্মিক পরিশুদ্ধতার জন্য রোজা পালন করবে, তাদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের চেয়েও বেশি সুগন্ধি মনে হবে।
রমজানের এ প্রশিক্ষণে যারা নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবে বছরের বাকী ১১ মাস রমজানের মতো নামাজ, রোজা, মন্দ কাজ পরিহারের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজ তৈরিতেও তারা সফল হবে।
সুতরাং রমজান মাস ও রোজা মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় নেয়ামত। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে এ ঘোষণাই দিয়েছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য হয়ে থাকে; কিন্তু রোজা শুধু আমার জন্য (রাখা হয়) আর আমি তার (রোজার) প্রতিদান দেব। (মুসলিম)
সে কারণে সমাজের প্রতিটি স্তরে পবিত্র রমজানের ফজিলত লাভ করতে এবং এ মাসর পবিত্রতা রক্ষা ও সুষ্ঠুভাবে কর্ম সম্পাদনে সচেতনা তৈরি করতে বিশ্ব মুসলিমের কাছে পবিত্র রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে ঈমানের একান্ত অপরিহার্য দাবি।
রমজানের প্রতিটি দিন ও ক্ষণ হোক গোনাহমুক্ত জীবন লাভের পাথেয়। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাসে কুরআনের হেদায়েত লাভে রমজানকে জানাই আহলান, সাহলান; শুভ হোক মাহে রমজান.