করোনাভাইরাস মহামারীর এ দুঃসময়ে আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুপার সাইক্লোন “আম্পান” বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় আকারে উপকূলে আঘাত হানবে এমন আশংকায় সবাই আতংকিত।
এ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তীব্র ঝড়ো বাতাস, ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশংকা থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সতর্কতার উল্লেখ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র গবেষক ড. মোহন কুমার দাশ সাংবাদিকদের বলেন, অতি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার মাধ্যমে দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ঘূর্ণিঝড়ের মতো সমন্বিত দুর্যোগ মোকাবিলা করা হবে এক নতুন অভিজ্ঞতা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে বিশ্বে রোল মডেল উল্লেখ করে বুয়েটের এ সিনিয়র গবেষক বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর এই দুর্যোগে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আশ্রয় কেন্দ্র বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর আগাম যথাযথ সরবরাহ, পারস্পরিক মানবিকতাবোধ, সচেতনতা এ কঠিন সময়ে সংক্রমণ রোধে ও দুর্যোগ মোকাবেলায় খুবই অপরিহার্য।
জনজীবনের সুরক্ষার কৌশল প্রণয়নে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক গবেষণা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ঘূর্ণিঝড় সিডর (নভেম্বর ২০০৭), আইলা (মে ২০০৯), ভিয়ারু (২০১৩), রোয়ানু (২০১৬), মোরা (২০১৭), বুলবুল (২০১৯) থেকে বাঁচার ও সুরক্ষার উপায় উদ্ভাবনের একমাত্র পন্থা আধুনিক গবেষণা।
ড. মোহন কুমার দাশ সাংবাদিকদের বলেন, আম্পান ঘূর্ণিঝড়টি এখন ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্নমে অবস্থিত ডপলার আবহাওয়া রাডারের কার্যকর সীমার আওতাধীনে চলে আসায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, উন্নততর আবহাওয়া গবেষণায় রাডার ডাটার গুরুত্ব অপরিসীম। এ ধরণের ডাটা সংরক্ষণ, গবেষণার জন্য সহজ প্রাপ্যতা করা দরকার।
সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে সাগর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, জীবনচক্র প্রভৃতি রাডার ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা আগামীতে সমন্বিত দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সমর্থ হবে।
তিনি জানান, এ ধরণের জনকল্যাণকারী অত্যাধুনিক গবেষণা দুর্লভ ডাটা সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছিল সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র (এসএমআরসি)।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, বজ্রঝড়, টর্নেডো, তাপ প্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, খরা, ভারী বৃষ্টি, অকাল বন্যা, বন্যা, নদী ভাঙ্গন, ভূমিধ্বস, ভূমিকম্প, সুনামি প্রভৃতি) ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদেরকে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার প্রতি আলোকপাত করে।
তারপর ও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র (শেরে বাংলা নগর, ঢাকা) বন্ধ করে এর গবেষক বিজ্ঞানীদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এটা আমাদের দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।