১৯ মে শনিবার বাদ ইশা তৃতীয় তারাবিহতে কুরআনুল কারীমের ৪নং পারার শুরু সূরা আলে ইমরানের ৯২ নং আয়াত ‘লান্তানালুল র্বিরা হাত্তা তুন্ফিকু মিম্মা তুহিব্বুন’ থেকে ৫নং পারার ১০নং পৃষ্ঠার শেষ সূরা নিসার ৮৭ নং আয়াতের শেষাংশ ‘ওয়া মান আস্দাকু মিনাল্লাহি হাদীসা’ পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।
আমরা অনেক সময় অত্যন্ত পাতলা ও নামকাওয়াস্তে কমমূল্যে যাকাতের কাপড় বিতরণ করে থাকি। এমনকি আমরা যা ফেলে দেই সেরকম উচ্ছিষ্ট খাবার অপরকে দান করে থাকি। এসব বিষয়ে সূরা আলে ইমরানের ৯২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না; যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে দান না কর। এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী কারীম (সা.) বলেন, তোমাদের কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ভাইয়ের জন্য ওই জিনিস পছন্দ না করবে যা সে তার নিজের জন্য পছন্দ করে।
একই সূরার ১১০ নং আয়াতে উম্মতে মুহাম্মাদীর শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে বলা হয়েছে, ‘কুনতুম খাইরা উম্মাতিন উখরিজাত লিন্নাস’ অর্থাৎ তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে। এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের ৪৫৫৭ নং হাদীসে বলা হয়েছে, তোমরা হলো শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যেই তোমাদের বের করে আনা হয়েছে। যারা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে সেই উম্মত নিজেরা যদি অসৎ কাজে জড়িত হয় তবে দাওয়াতের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা অনেক সময় একটা ভাল কাজ করতে গিয়েও সাহস হারিয়ে ফেলি। পিছে কে কি বলবে, সে ভাবনায়।
এ প্রসঙ্গে ১৩৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ওয়ালা তাহিনু, ওয়ালা তাহযানু। অর্থাৎ তোমরা হীনবল ও বিষন্ন হয়ো না। যদি তোমরা মুমিন হও তাহলে তোমরাই বিজয়ী হবে। অতএব, ভাল কাজ করতে টেনশানের কোন কারণ নেই। সকল বিষয়ে আল্লাহই হেফাজত করবেন। তবে প্রকৃত মুমিন হতে হবে।
দুনিয়ার ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে অনেকে মাওলাকে ভুলে রয়েছি। এটা আদৌ উচিৎ নয়। এ বিষয়ে সূরা আলে ইমরানের ১৯৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, মাতাউন ক্বালীল। তোমরা যে ভোগ বিলাস করতেছ তা একেবারে নগণ্য ও স্বল্প সময়ের জন্য। তারপর তোমাদের স্থান হবে জাহান্নাম। ওটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান! উত্তরাধিকারীরা কে কত অংশ পাবে সূরা নিসায় তা সুস্পষ্ট বয়ান করা হয়েছে।
ওই সূরার ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করল তারা যেন নিজেই নিজের পেটে আগুন ভরল। যারা ইয়াতিমখানা চালান এমনকি যাদের হাতে ইয়াতিমের মাল বন্টিত হয় ওইসব নেতাদের এ আয়াত বিষয়ে অত্যন্ত চৌকান্না থাকতে হবে। অনেকে সুন্নাতকে এড়িয়ে যাওয়ার ফন্দি খোঁজে। অথচ সূরা নিসার ৮০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মাইয়্যিত্বিউর রাসূলা ফাক্বাদ আতায়াল্লাহ।’ অর্থাৎ যে রাসুলের অনুগত হয় সে আল্লাহরই অনুগত হয়ে থাকে। কাজেই সুন্নাতকে এড়িয়ে চলা হবে বোকামীর নামান্তর।
আমরা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে ভাল ভাল কথা শুনেও আমলে নেই না। আল্লাহর কথা পর্যন্ত ভ্রুক্ষেপ করি না। অবলীলায় অমান্য করে চলা হয়ে থাকে কুরআনের বানী। এটা কতই না জঘণ্য আচরণ! আজকের তৃতীয় তারাবিহতে সর্বশেষ যে আয়াত তেলাওয়াত করা হবে তাতে বলা হয়েছে, ওয়া মান আসদাক্বু মিনাল্লাহি হাদীসা। অর্থাৎ আল্লাহর কথার চেয়ে আর কার কথা বেশি সত্য হতে পারে? এর আগের অংশে বলা হয়েছে, লাইয়াজমায়ান্নাকুম ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতে লা রাইবা ফীহ্। অর্থাৎ ক্বিয়ামতে অবশ্যই সবাইকে জমায়েত করা হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।
এ কথা জানার পরও যারা উদাসীন হয়ে থাকবে তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, উলায়িকা কাল আনয়াম, বালহুম আদ্বাল। অর্থাৎ ওরা চতুষ্পদ প্রাণীর সমতুল্য এমনকি তার চেয়েও অধম। তৃতীয় তারাবীহতে তিলাওয়াতকৃত দেড় পারায় অনেক আলোচনার মধ্যে এতটুকুর উপর আলোকপাত করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এর উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখক: খতীব, দিউ বায়তুস সালাম জামে মসজিদ, কলেজ রোড, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।