এপ্রিল ২৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ ঢাকা প্রশাসন

নারায়ণগঞ্জে অভাবী মানুষের পাশে র‍্যাব

করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কর্মহীন ও প্রতিবন্ধী অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে র‍্যাব-১১। তারা প্রতি রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভাবগ্রস্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসসহ শিশুখাদ্য।

র‍্যাব তাদের নিজস্ব গোয়েন্দাদের দিয়ে খোঁজ নিয়ে প্রকৃত অভাবী মানুষগুলোর মধ্যে ত্রাণসামগ্রীগুলো পৌঁছে দিচ্ছে। তারা এ পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে।

গত ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এখনো এই লকডাউন চলছে। নারায়ণগঞ্জে ভাসমান ও শ্রমিক শ্রেণি বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেশি। করোনার কারণে এসব মানুষ খাদ্যসংকটে পড়েছেন। সেই মানুষদের খাদ্যসংকটের বিষয়টি বিবেচনা করে মানবিক কারণে র‍্যাব কর্মহীন অভাবী মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাদের ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে সরকারি কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও শুরুতে ব্যাটালিয়নের সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় এ কার্যক্রম শুরু হয়। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় এ কার্যক্রম আরও প্রসারিত হয়।

গত ৮ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত এক মাস তিন দিনে তারা সাড়ে ৬ হাজার পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে। পরিবারপ্রতি খাদ্যসহায়তায় তাদের প্যাকেটে ছিল ৫ থেকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১ লিটার তেল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি ছোলা, আধা কেজি মুড়ি, ১ কেজি লবণ, ১ থেকে ২ কেজি চিনি, ২টি সাবান। এ ছাড়া ১৭২ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারকে খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭৩০টি শিশুর জন্য শিশুখাদ্যের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে তারা।

এদিকে দেশের বাইরে থেকে প্রবাসীরা ফোনে দেশে থাকা তাঁদের পরিবারের কষ্টের বিষয়টি র‍্যাবকে জানালে এ রকম তিন প্রবাসীর পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে র‍্যাব। বিকাশেও অনেক মধ্যবিত্ত অভাবী পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে তারা। মসজিদ ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও খাদেম যাঁরা অভাবে থাকলেও কারও কাছে চাইতে পারেন না, এমন লোকদের খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে র‍্যাব।

র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এ জেলায় ভাসমান লোকের বসবাস বেশি। করোনার কারণে তারা কর্মহীন ও বেকার হয়ে পড়েছে। তাই মানবিক কারণে র‍্যাব এই উদ্যোগ নিয়েছে। ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অভাবী এলাকা ও মানুষগুলো সম্পর্কে তাদের গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে রাতের বেলায় ওই এলাকায় প্রকৃত অভাবী মানুষগুলোর বাড়ি বাড়ি ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয় তারা।

রাতে ত্রাণ দেওয়ার বিষয়ে র‍্যাব জানায়, দিনের বেলায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে গেলে সেখানে শত শত মানুষের সমাগম হয়। এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না, এতে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এতে তাদের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত অনেক পরিবার র‍্যাব অফিসে এসেও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন। র‍্যাব সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে শহরের প্রধান, বড় কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে রং দিয়ে বৃত্ত তৈরি, বাঁশের বেষ্টনী নির্মাণ, বিভিন্ন এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু থেকে চালিয়ে আসছে।

শিমরাইল এলাকার বাসিন্দা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর চোখে আলো নেই। তাই ত্রাণের জন্য কোথাও যেতে পারেননি। র‍্যাব তাঁকেসহ তাঁর মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে।

শহরের ভুঁইয়ারবাগ এলাকার বাসিন্দা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবার। তারা কারও কাছে হাত পাততে পারছে না। আবার ত্রাণসামগ্রীর জন্য কোথাও গিয়ে লাইন ধরতে পারছে না। তবে তাঁদের এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাতের বেলায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে র‍্যাব।

এ বিষয়ে র‍্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সীমিত পরিসরে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকৃত অভাবগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। যত দিন করোনা সংকট থাকবে, তত দিন তাঁদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

এদিকে এই করোনার সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি র‍্যাব মাদক উদ্ধার, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।

এ বিষয়ে র‍্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আর্তমানবতার সেবায় সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের অনাহারী ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য র‍্যাব এগিয়ে এসেছে। দিনের বেলায় সরকারি দায়িত্ব পালন শেষে রাতে বিশ্রামের সময় তাঁদের এই সহায়তা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব ও র‍্যাব সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এই সহায়তা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত এ জেলায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক কর্মচারীসহ ৫৯ জন। এ ছাড়া করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামসহ ১১ চিকিৎসক, ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ১ হাজার ৪৭৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৭৯ জন। আক্রান্তের হার বেশি নারায়ণগঞ্জ সিটি ও সদর উপজেলায়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

অটোরিকশায় ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভিডিও ভাইরাল

banglarmukh official

বগুড়ায় স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

banglarmukh official

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ হাইকোর্টের

banglarmukh official

বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার শিশু, ভগ্নিপতি ও শ্বশুর আটক

banglarmukh official