পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সহিংসতায় বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আতঙ্কে নিরাপত্তাহীনতায় অভিযোগ সাধারণ মানুষের। এখনো কাটেনি অস্থিরতা। তবে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বলছে, সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুত প্রশাসন। অন্যদিকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় ৬ খুনের ঘটনার তিন দিনেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। স্থবির হয়ে আছে পুরো নানিয়ারচর উপজেলা। স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। রাঙামাটির নানিয়ারচ উপজেলার চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (গণতান্ত্রিকের) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা হত্যাকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সহিংসতার আশংকা করছে স্থানীয়রা। তাই আতঙ্কে বসছেনা কোনো হাটবাজার। রাঙামাটি-নানিয়ারচর-খাগড়াছড়ি সড়কে চলাচল করেনি কোন যানবাহন। উপজেলার কিছু কিছু দোকান খুলা থাকলেও মানুষ ছিল কম।
রবিবার সকালে নানিয়ারচর উপজেলায় ও রাঙামাটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণ করতে আসেন চট্টগ্রাম জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার। এসময় তার সফর সঙ্গি ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ড. এসএম মনিরুজ্জামান বিপিএম, পিপিএম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন্স এন্ড ক্রাইম) এস এম রোকন উদ্দিন, অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মো. গোলাম ফারুক।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এ কে এম মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, ৬ খুনের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় কোন মামলা হয়নি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলার প্রক্রিয়াদিন আছে। যারা সন্ত্রাসী, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
তবে রাঙামাটি জেলা মানবাধিকার কর্মী রত্না রানি দে বলছেন, যারা অশান্তি সৃষ্টি করে তারা কোন জাতিগোষ্ঠীর হতে পারে না। তাই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিহ্নত করে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এদিকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নানিয়ারচর উপজেলার চেয়ারম্যান ও এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমার হত্যার বিচারের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন করেছে জেলা আইনজীবি সমিতি। রবিবার দুপুরে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে রাঙামাটি আইনজীবি সমিতির সভাপতি পিপি মো. রফিকুল আলম, সাধারণ সম্পাদক রাজীব চাকমা, আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট মো. মোক্তার আহম্মেদ, প্রবীণ আইনজীবি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, প্রতিম রায় পাম্পু, সুস্মিতা চাকমা বক্তব্য রাখেন।
এদিকে, রাঙামাটিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাইক্রোবাস চালক সজীব হাওলাদারের খুনিদের গ্রেফতার এবং জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফসহ পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে সোমবার ও মঙ্গলবার রাঙামাটিতে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের পালন করবে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।
উল্লেখ্য, গত বৃহষ্পতিবার সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ার করে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করে। এরপরের দিন শুক্রবার রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়ি এলাকায় একইভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ পার্বত্য এমএন লারমা লারমা গ্রুপ অর্থাৎ (সংষ্কারপন্তি) যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য তনয় চাকমা (৩১), মহালছড়ি যুব সমিতির সভাপতি সুজন চাকমা (৩০), সেতু লাল চাকমা, (৩৬) ও এক বাঙালী মাইক্রোবাসের চালক মো. সজিব (৩৫)নিহত নির্মমভাবে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। এসব ঘটনায় পুরো পাহাড়ে অশান্তি ছড়িয়ে পরেছে।